বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ বা ফরেক্স রিজার্ভের পরিস্থিতি বর্তমানে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি আশাপ্রদ সংকেত হিসেবে দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ রোববার (২০ অক্টোবর) বার্তাসংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানিয়েছেন, আগের সরকারের আমলে যেখানে প্রতি মাসে রিজার্ভ ১৩০ কোটি ডলার করে কমছিল এখন তা ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।
বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং অন্যান্য জরুরি সেবা বাবদ সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২৫০ কোটি ডলারের পাওনা জমে রয়েছে। তবে গত দুই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৮০ কোটি ডলার পরিশোধ করে এই বকেয়া পরিমাণকে মাত্র ৭০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। গভর্নর উল্লেখ করেছেন, সার ও বিদ্যুতের জন্য যে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে তা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করবে। এ ছাড়া আদানি এবং শেভরনের মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছেও অর্থ পরিশোধের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার নেট রিজার্ভ গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৯৮২ কোটি ডলার এবং মোট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার হিসেবে গণনা করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) রিজার্ভ গণনা পদ্ধতি বিপিএম৬-এর আওতায় আসে। গভর্নর আহসান বলেন, তাদের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের দেনা শুন্যে নামিয়ে আনা। যদি এটি সফল হয় তাহলে বাজারে তারল্য বৃদ্ধি পাবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সহায়ক হবে।
তিনি আরও যোগ করেন, এই ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ কমবে এবং এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আরও বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তবে গভর্নর কিছুটা চিন্তিত যে, বর্তমানে দেশের বিদেশি ঋণ ১০৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং এর পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে অন্তত এক বছর। তার মতে, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না।
গভর্নরের এই মন্তব্যগুলো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধারের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। বৈদেশিক রিজার্ভের উন্নতি এবং ঋণের চাপ কমানো সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে রয়েছে। তবে গভর্নরের আশাবাদী বক্তব্য দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন এক প্রত্যাশা তৈরি করছে।