অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী আয়ে উল্লেখযোগ্য উত্থান লক্ষ্য করা গেছে। এই সময়ে বাংলাদেশে ১৫৩ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১৮ হাজার ৩১০ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ২০০ টাকা। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হিসাব প্রতি ডলার ১১৯ টাকা ৪৭ পয়সা হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
অর্থনীতিতে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে সম্প্রতি রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা গেলেও অক্টোবরের এই উর্ধ্বগতি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম ১৯ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ সময় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার দেশে এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ১২ হাজার ৫৪০ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা। অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪০ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৪০ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার এসেছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এককভাবে এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ৩০ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার ৬৮১ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক, যার মাধ্যমে ১০ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এরপর রয়েছে সোনালী ব্যাংক, যার মাধ্যমে ১০ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার ডলার এসেছে।
বেসরকারি খাতে ব্র্যাক ব্যাংক ৯ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে, যা ব্যাংকটির স্থিতিশীল অবস্থানকে তুলে ধরে। অন্যদিকে, রূপালী ব্যাংক ৯ কোটি ৬০ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং অগ্রণী ব্যাংক ৯ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করেছে।
বাংলাদেশের প্রবাসী আয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এর ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আমদানি-রপ্তানি বৈষম্য কমাতে এবং দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত রাখতে সহায়তা করছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা মন্দাভাব দেখা গিয়েছিল। সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে একটি উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করা গেছে, যা বিশেষজ্ঞদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে অক্টোবর মাসের প্রথম ১৯ দিনের এই ইতিবাচক প্রবণতা রেমিট্যান্স প্রবাহের স্থিতিশীলতায় নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্রমবর্ধমান সাফল্য প্রমাণ করে যে, তারা এই খাতে অধিক প্রতিযোগিতা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদান ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করায় বেসরকারি ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আহরণে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করছে। এর ফলে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক’কেও রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য নতুন নীতিমালা ও সুবিধা প্রদান করতে হবে। প্রবাসীদের জন্য আরও সুবিধাজনক ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করলে এবং প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিলে, রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অক্টোবরের এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, প্রবাসী আয়ের ধারায় পুনরায় উত্থান ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে আরও মজবুত অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।