দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২২ অক্টোবর, এক নির্দেশনায় নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই নতুন হার কার্যকর হবে আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে।
নতুন নীতি অনুযায়ী, স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ১১.৫ শতাংশে এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার ৮.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। মূলত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উল্লেখ্য, মাত্র এক মাস আগেই—২৪ সেপ্টেম্বর—নীতি সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯.৫ শতাংশ করা হয়েছিল। গত বছরের মে মাসে এই হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে মোট ১০ বার নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরে এটিই পঞ্চমবারের মতো সুদহার বৃদ্ধির ঘটনা।
এদিকে, রেপোতে ব্যাংকগুলোর অর্থ ধার নেওয়ার নিয়মেও পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২১ অক্টোবর জারি করা আরেকটি সার্কুলারে বলা হয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহে শুধুমাত্র মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোতে অর্থ ধার করতে পারবে। ব্যাংকগুলো রিজার্ভ মেইনটেন্যান্স পিরিয়ডে (আরএমপি) ওভারনাইট রেপোর মাধ্যমে তাদের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) বজায় রাখতে পারবে।
এর আগে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক দৈনিক রেপোতে অর্থ ধার দেওয়া বন্ধ রেখেছিল এবং সপ্তাহে দুদিন সোম ও বুধবার, ব্যাংকগুলোকে এই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছিল। তবে নতুন নীতির অধীনে এই সুযোগ এখন কেবল সপ্তাহে একদিনের জন্য সীমিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত মাসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সংকুলানমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে। তিনি তখন বলেছিলেন, “আমরা আশা করছি, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিল নাগাদ মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল হবে। এর আগ পর্যন্ত নীতি সুদহার বাড়ানো হতে পারে।”
এর আগে ২৫ আগস্ট, নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯ শতাংশ করা হয়েছিল। তারপর সেপ্টেম্বরে আবার তা বাড়িয়ে ৯.৫ শতাংশ করা হয়। অর্থাৎ, ধারাবাহিকভাবে সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার চেষ্টা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ঋণের খরচ বাড়াবে, যা বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকিং খাত, বিনিয়োগ এবং সাধারণ জনগণের ঋণ গ্রহণে সরাসরি প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়ে যাবে, যা বিনিয়োগের ওপর কিছুটা চাপ তৈরি করতে পারে। তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ইতিবাচক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে। মুদ্রানীতি কঠোর করার এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদে চাপ সৃষ্টি করলেও, ভবিষ্যতে এটি মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।