গত দশক ধরে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য, প্রযুক্তি উৎকর্ষ এবং সরকারের সহায়ক নীতিমালার কারণে ব্যবসায়িক সুযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
মূলত বাংলাদেশ একটি অর্থনৈতিক দেশ, যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, শ্রমবাজার, সরকারের নীতিগত সহায়তা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও দুর্নীতি ও শেয়ারবাজারের টালমাটাল অবস্থার কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিস্থিতি প্রতিকূল ছিল, তবুও বর্তমান পরিস্থিতি দেখে বলা যায় যে, সে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশে নানাভাবে ব্যবসার বিভিন্ন সুযোগ ও তার সম্ভাবনা তৈরীর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশ ও তার জনগণ দীর্ঘমেয়াদী সুফল ভোগ করবে। যেমন দেশীয় ও বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা হলে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি উন্নত হবে, নতুন ব্যবসার বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ হলে বেকারত্ব হ্রাস পাবে, রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলা যাবে। ব্যবসায়িক সুযোগ ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক বিনিয়োগ, উৎপাদনশীল খাতের বিকাশ, নতুন উদ্যোগের উৎসাহ প্রদান এবং টেকসই উন্নয়ন যা জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিস্থিতি:
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কয়েক বছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উচ্চমুখি থাকলেও করোনার পর থেকে তা কখনো নিম্নমুখী আবার কখনো উচ্চমুখী হয়েছে। ২০২৩ সালে আনুমানিক ৬.০৩% ছিল, তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, মুদ্রাস্ফীতি এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এই হার পূর্বের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে। তবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বিভিন্ন সূত্র থেকে ৬.০% থেকে ৬.৩% অনুমান করা হয়েছে। যা ৪৬ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিবর্তন, সরকারের বিভিন্ন নীতিগত পরিবর্তন ইত্যাদির ফলে জিডিপি পরিবর্তন হতে পারে এবং এরকম নানা প্রভাবের ফলে জিডিপি কি হতে পারে তা মূলত: নির্ভর করে সারা বছরের ব্যবসায়িক ও নানা অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর।
বর্তমান পরিস্থিতি:
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিস্থিতির একটি সংকট হলো বিদ্যুৎ সংকট। বর্তমানে বিদ্যুৎ জ্বালানির সংকট ঘাটতির কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় উৎপাদনশীলতা কমছে এবং খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে, আমদানি নির্ভর ব্যবসাগুলো এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী অর্থনৈতিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছেন।
এছাড়া মুদ্রাস্ফীতির হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২৪ সালে মুদ্রাস্ফীতি হার বিশেষ করে খাদ্য ও জ্বালানি খাতে বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে গড় মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি। এটি মূলতঃ পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, আমদানি খরচ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। যার ফলে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে খরচ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মুদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে খুচরা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী, সবাই ক্রয়ের পরিমাণ কমে যাবার ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাজ্য। বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে একটি সুসংবাদ হলো , বাংলাদেশের জন্য স্থানীয় কিছু শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তারা বাংলাদেশের রপ্তানি এবং বিনিয়োগের জন্য সহায়তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি এবং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রযুক্তি এবং সেবার খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে।
ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশকে একটি কৌশলগত ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে দেখতে আগ্রহী। যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। বিভিন্ন দেশও বাংলাদেশের সাথে ব্যবসায় আগ্রহ দেখাচ্ছে। বলা যায় বাংলাদেশের সভৌগোলিক অবস্থান, শ্রমবাজার এবং সরকারের নীতিগত সহায়তা ইত্যাদির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেয়ারবাজার পরিস্থিতি:
বর্তমানে বাংলাদেশে শেয়ার বাজারের আমদানি ও রপ্তানি খাতে কিছুটা চাপ দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ডলার সংকট এবং আমদানি ব্যয়ের বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়িক খাতে চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। এদিকে, ডলার সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অপরদিকে, রপ্তানি খাতে ও কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা এবং অন্যান্য দেশের সাপ্লাই চেইন সমস্যার কারণে রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা পর্যাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শেয়ার বাজারে আমদানি-রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের মূল্য কিছুটা উঠানামা করছে এবং বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সতর্ক অবস্থান করছেন। ২০২৩ সালে শেয়ার বাজার স্থবির ছিল এবং ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতির সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি। তবে সরকার পতনের পর ৬ ও ৭ ই আগস্ট শেয়ার বাজারের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল, যদিও এরপরে শেয়ারবাজারের গতি আবারো পতনের মুখে যায়।বর্তমানে বাজারের অবস্থা তিনটি মূল বিষয় নির্ভর করছে: মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার এবং পুঁজিবাজারের ফ্লোর প্রাইস।
ফ্লোর প্রাইস নিয়মাবলী শেয়ার মূল্যকে একটি নির্দিষ্ট দরে বেঁধে রেখেছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়েছে। নতুন সরকার আসার পর ফ্লোর সরানোর সম্ভাবনা থাকলেও, তাতে বাজারে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা অনিশ্চিত। তবে উন্নত ও স্বচ্ছ বাজার গঠনের জন্য সঠিক নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। সামনের দিনগুলিতে ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এটি নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে এর ওপর। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস হলো, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশ হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫.৮% হতে পারে। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখনো পরিপূর্ণ হয়নি। যা সড়ক, রেলপথ এবং বন্দর গুলোর উন্নয়নের অভাব ও সরবরাহ চেইন এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশাসনিক জটিলতার কারণে উদ্যোক্তারা অনেক সময়- সময়মত অনুমোদন এবং লাইসেন্স পেতে সমস্যায় পড়েন। সঠিক ও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া না থাকার কারণে ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলো ব্যাহত হয় এবং কার্যক্রমের গতি ধীর করে ফেলে। এছাড়া বাংলাদেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে উৎপাদনশীলতা উদ্ভাবন ক্ষমতায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রযুক্তি আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সীমাবদ্ধতার ফলে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে পৌঁছতে পারছে না। যার ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ছে।
বৈশ্বিকবাজারে প্রবেশ এবং প্রতিযোগিতাও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে টিকে থাকতে হলে ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় মানের পণ্য এবং পরিষেবা নিশ্চিত করতে হবে, যা অনেক ব্যয়বহুল এবং বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও সমাধানে কার্যকারিতা অনস্বীকার্য।
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বাধা- দুর্নীতি:
ব্রিটিশ সরকারের মতে, দুর্নীতি বাংলাদেশে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছু প্রভাবিত করে। বিশেষ করে, বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। যুক্তরাজ্যের চোখে বাংলাদেশের ব্যবসায় ক্ষেত্রে বড় বাধা দুর্নীতি। অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বাংলাদেশের মতে- সর্বশেষ দুর্নীতি ধারণা সূচকে ২০২৩ সালে ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৪৯ তম অবস্থানে রয়েছে। এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪, যা গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। তবে ২০২৪ সালে বর্তমান পরিস্থিতি ও ধারার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সূচকটি আরো খারাপ হতে পারে। দুর্নীতিকেই ব্যবসায়ীদের ব্যবসার পথে একটি বড় বাধা বলা যেতে পারে।
ব্যবসায়িকরা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আরো বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। যেমন: বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পরিবহন ব্যবস্থার ঘাটতি, লজিস্টিক চেইনের অপ্রতুলতা ও উচ্চ ব্যয়, ব্যবসায় নিবন্ধন নীতির জটিলতা, লাইসেন্সিং এবং কর প্রদান প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং সময় সাপেক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, উচ্চমানের দক্ষ কর্মীর অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে ।হরতাল, ধর্মঘট এবং বিক্ষোভের কারণে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। কর ও ভ্যাটের উচ্চ হার, অপরিকল্পিত ও নগরায়ন ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদি কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, উচ্চ সুদের হার এবং ব্যাংক ঋণ শর্তগুলোর কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছেন না। যে কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ইতিবাচক দিক:
বাংলাদেশের ব্যবসায়ের সুযোগ ও সম্ভাবনার ইতিবাচক দিকগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।বাংলাদেশের শিল্প খাতে প্রচুর ব্যবসায়ী রয়েছে। উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসা শুরু করে দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, বিশেষ করে পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে। বৈশ্বিক বাণিজ্য চুক্তি এবং রপ্তানি প্রসারণে ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ প্রদান করছে। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন বাজার এবং বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করছে।
ব্যবসায় সংকট মোকাবেলায় সরকারি নীতিমালা ও সহায়তা:
সরকার কিছু নির্দিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রদান করছে। যেমন- ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ খাতে সহজ ঋণ সুবিধা, কর সুবিধা ইত্যাদি। এগুলো ব্যবসায়ীদের জন্যে পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণে অনেকেই সমস্যায় রয়েছেন।
এছাড়া সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে, ই কমার্স এবং ফ্রিল্যান্সিং খাতে ব্যবসায়ীরা ভালো সুযোগ পাচ্ছেন। বিগত সরকারের নির্ধারণ করা ফ্রিল্যান্সারদের জন্য করমুক্ত সুবিধা এখনো বহাল থাকায় এক্ষেত্রে আয় রোজগারের পথে আলাদা সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রথাগত ব্যবসায়ীরা এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সরকার ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যেমন- করছাড়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উদ্যোক্তা সহায়ক প্যাকেজ। এসব নীতি ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা নিশ্চিত করছে। ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি ব্যবসায়িক কার্যক্রম কে আরো উন্নত এবং দক্ষ করে তুলেছে।
বাংলাদেশের তরুণ ও উদ্যমী শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শ্রম শক্তিকে কাজে লাগানো সম্ভব। ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ, ইনকিউবেটর এবং স্টার্ট আপ শুরুর ক্ষেত্রে প্রদানকৃত সুযোগ সুবিধা উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্যোগ শুরু করার জন্য সহায়ক হচ্ছে।দেশীয়বাজারে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সম্প্রসারণ এবং পরিবর্তিত ভোক্তা চাহিদার কারণে নতুন পণ্যের এবং পরিষদের চাহিদা বাড়ছে। যার ফলে ব্যবসায়ীদের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিবাচক দিকগুলো ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবৃদ্ধি ও সফলতার সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি ব্যবসায়িক সম্ভাবনায় একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করছে। বিভিন্ন খাতে যেমন: পোশাক, প্রযুক্তি কৃষি এবং পর্যটন ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান সুযোগ ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সরকারি নীতি ও সহায়তা , বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, করছাড় এবং বিনিয়োগ প্রণোদনা ইত্যাদি ব্যবসায়ী কার্যক্রমকে আরো সহায়ক করেছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ডিজিটাল ব্যবসায়ের উদ্ভাবন ব্যবসায়ের সফলতা ও সুবিধাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে। তবে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জগুলো যেমন- অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, প্রশাসনিক জটিলতা, দক্ষতার অভাব-এ বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তাই এসব সমস্যার সমাধান এবং পরিকল্পনা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ব্যবসায়ে সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম হওয়া যাবে।