দেশের তৈরি পোশাক খাতে দীর্ঘ ২১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম মূল্য সংযোজন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে এ খাতের নিট রপ্তানি মাত্র ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাস সংকটের ফলে স্পিনিং উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বিদেশি ফেব্রিক আমদানির খরচ বেড়ে গেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিল্পের উপার্জনে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে নিট রপ্তানি ৭২.২০ শতাংশে থাকলেও তা বর্তমানে বেশ খানিকটা কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনকে ঘিরে তৈরি পোশাক শিল্পের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের প্রান্তিকের ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ দেখানো তথ্যের সঙ্গে তুলনা করায় প্রকৃত অবস্থার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে জানান,
“এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের রপ্তানি পরিসংখ্যান ঠিক থাকলেও জানুয়ারি-মার্চের তথ্য অনেকটা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। সেই সময় রপ্তানির পরিমাণ আসলে এতটা বেশি ছিল না।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাত থেকে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৮.৮৪ বিলিয়ন ডলার।
যা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ৩৬ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩৮ শতাংশ কম।
প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে রপ্তানি আয়ও কমেছে, যা এ খাতে আগামী মাসগুলোতে আরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গ্যাস সংকটের প্রভাব এবং বৈশ্বিক মন্দার চাপের পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানির খরচ বৃদ্ধির ফলে পোশাক শিল্পে আরও চাপ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে ফ্যাব্রিক তৈরি করতে না পারায় কাঁচামাল আমদানির খরচ ৩.৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৪৩ শতাংশ। এ প্রান্তিকে নিট রপ্তানি আয় ৫.০৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, রপ্তানির এই নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হতে পারে।
তার মতে, “এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাড়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন পণ্যের অর্ডারও কম আসছে। ফলে রপ্তানি অর্ডার কমার ফলে আগামীতে রপ্তানিতে আরও নিম্নগতি দেখা যাবে।”
এ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের সংকট সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন-
“গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করলে কারখানাগুলো উৎপাদন বজায় রাখতে পারবে।”
এছাড়াও, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া প্রণোদনা বাতিলের নীতি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন বিকেএমইএ সভাপতি।