বাংলাদেশ সরকার গত বছর ডলার সংকট ও আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর দ্বারস্থ হয়। আইএমএফ ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে ইডিএফ (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) ফান্ডের আকার কমানোর নির্দেশনা দেয়। এই নির্দেশনার ফলে, ফান্ডের আকার বর্তমানে আড়াই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও নিশ্চিত করেছে যে, বিশ্ব ব্যাংক ইডিএফ ফান্ডে এক বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত এক বছরে ইডিএফ ফান্ডের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়েছে। করোনার সময় যখন এটি ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, তখন থেকেই পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হতে থাকে। এই সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে সফর করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সফর শেষে গভর্নর জানিয়েছেন, বিশ্ব ব্যাংক থেকে আসা এক বিলিয়ন ডলারের ঋণের গ্যারান্টি দেশের জন্য আশার আলো হতে পারে।
তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন রিপোর্টে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। রপ্তানিতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে গঠিত ইডিএফ ফান্ডের অর্থ কয়েকজন ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের জন্য ব্যবহার করছেন। অনেকেই ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে খেলাপি হয়ে পড়েছেন, এমনকি কিছু ব্যবসায়ী এ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। করোনাকালে তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবিরের সময় ফান্ডটির আকার ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। কিন্তু এর পর থেকে অভিযোগ ওঠে যে, এই ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত পূরণের জন্য ইডিএফ ফান্ডের আকার কমাতে সরকার বাধ্য হয়েছে। ১৯৮৯ সালে রপ্তানিকারকদের জন্য কাঁচামাল আমদানির উদ্দেশ্যে গঠিত এই ফান্ডের আকার ২০১৬ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২০ সালের মার্চে করোনার কারণে ব্যবসা বাঁচানোর অজুহাতে ফান্ডটি ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়, যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পর সংকটে পড়তে থাকে।
নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব গ্রহণের পর ইডিএফ ফান্ডের আকার কমানোর উদ্যোগ নেন। তার নির্দেশে ফান্ডটির আকার মে মাসে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমতে থাকে। জুলাই মাসে এটি ৩.২১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আগস্টে ফান্ডটির পরিমাণ ২.৯১ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে তা ২.৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
আইএমএফের দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণের লক্ষ্যে গত বছর মাঝামাঝি সময়ে এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। সীমিত পর্যায়ে পুনরায় ঋণ বিতরণ শুরু হলেও সূত্র জানাচ্ছে, দেশের শীর্ষ ৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ আটকে রয়েছে। এর মধ্যে আটটি গ্রুপের কাছে প্রায় আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের ইডিএফ ঋণ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।