বেলারুশের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। ঋণ খেলাপি হওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাপের মধ্যে রয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী (বেলারুশ) ৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের কিস্তি পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে। কারণ সরকার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দুটি কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। বেলারুশের অর্থমন্ত্রী ইউরি সেলিভারসাতু এর জন্য আর্থিক উপদেষ্টার নির্দেশনা চেয়েছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে বেলারুশ দূতাবাস এ বিষয়ে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে একটি কূটনৈতিক চিঠি দিয়েছে। সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি আসে। সূত্র : ইআরডি
বেলারুশ অর্থমন্ত্রী চিঠিতে জানান, ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যাপারে আগেও একটি পত্র দিয়েছি, যার জবাব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ডলারে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে লেনদেনের মাধ্যম সুইফট ব্যবহারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও সেটি এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।
জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার ও ২০২৪ সালের মার্চে ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলারের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় সড়ক তৈরির জন্য ৫ কোটি মার্কিন ডলারের নির্মাণ সামগ্রীর যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছিল বেলারুশ সরকার।
বেলারুশের অর্থমন্ত্রী চিঠিতে আরও জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেলারুশের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আপনাকে (অর্থ উপদেষ্টা) ধন্যবাদ। আমাদের দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্যতা ও পরিকল্পনা বিবেচনা করে আমরা আরও সহযোগিতা বাড়ানোর আশা করছি। কিন্তু ২০১৫ সালে বেলারুশ সরকার বাংলাদেশের সড়ক তৈরির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্মাণ কাজে ব্যবহারের যন্ত্রাংশ প্রদান করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এর মূল্য পরিশোধে কিস্তি বন্ধ রেখেছে। বকেয়া পাওনার জন্য বেলারুশ সরকার বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগাযোগ করেছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অর্থ উপদেষ্টার নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।
গবেষণা অনুসারে, আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট থেকে বেলারুশকে বিচ্ছিন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে বাংলাদেশ সুইফট ব্যবহার করে বেলারুশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতে পারছে না। এতে বেলারুশ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি বিগত সরকার।
তবে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য লেনদেন বিকল্প মাধ্যম চীনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন পদ্ধতি ‘সিএফএক্সপিএস’ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেলারুশ সরকার। ‘সিএফএক্সপিএস’ পদ্ধতিতে ঋণের কিস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে মার্কিন ডলার ব্যবহারের কথা হয়। যদি ডলারে সেটি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে চীনা মুদ্রা ইয়েন বা রাশিয়ার মুদ্রা রুবল এর মাধ্যমে পরিশোধের প্রস্তাব দেয় বেলারুশ সরকার।
সূত্র মতে, ২০১৩ সালে বেলারুশ থেকে সহজ শর্তে পণ্য ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানির বিষয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন প্রোভিশনস অব এক্সপোর্ট কমোডিটি ক্রেডিট নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্তে বেলারুশ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য (যানবাহন ও যন্ত্রপাতি) আমদানি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মেশিনগুলি পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও পরিষ্কার, ড্রেন নির্মাণ, মেরামত ও পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। মোট ঋণের মধ্যে ৩.৩১ বিলিয়ন ডলার মেশিনারি কেনার জন্য বেলারুশ থেকে ধার করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১৩টি কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা ১৪ তম কিস্তি পরিশোধ করার আগে, আর্থিক লেনদেনের জন্য বার্তা বিনিময়কারী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সুইফট থেকে বেলারুশের কিছু ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিয়েছে৷
এটি শনিবার, ১২মার্চ, ২০২২ থেকে কার্যকর হবে৷ বাংলাদেশি ব্যাংকগুলি আর এই দুটি দেশের ব্যাংকের সাথে সরাসরি লেনদেন করছে না৷ ফলে ১৪তম কিস্তির পরিমাণ ২৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৩ মার্কিন ডলার ও ঋণের সুদ ১ লাখ ২১ হাজার ৬১২ ডলার মোট ২৭ লাখ ৭০ হাজার ৫০৫ ডলার পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এরপর আরেকটি নতুন কিস্তি বকেয়া আছে।