ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর, বুধবার ডলারের মূল্য এক লাফে চার মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে এই বিশাল মুদ্রাগত পরিবর্তনের প্রভাব এখনো ছড়িয়ে পড়ছে, যা বিনিয়োগকারী এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একই দিনে বিটকয়েনের মূল্যও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা ট্রাম্পের নীতি এবং তার ক্রিপ্টো-সহায়ক অবস্থানকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ প্রকাশ করছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতিগুলোতে অবৈধ অভিবাসন সীমাবদ্ধ করা, নতুন শুল্ক আরোপ এবং কর হ্রাসের পরিকল্পনা রয়েছে। এই নীতিগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও, একে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ হার কমাতে বাধ্য হতে পারে, যা বিনিয়োগে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং ডলারের মূল্যের ওপর আরও চাপ ফেলবে।
ট্র্যাডুর সিনিয়র মার্কেট স্পেশালিস্ট নিকোস জাবুরাস মনে করেন, “এই পরিবর্তন মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং ফেডকে ধীরগতির নীতি গ্রহণে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে ডলার আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক নীতির সম্ভাব্য প্রভাব বিশেষভাবে ইউরোপীয় অঞ্চল, মেক্সিকো, চীন এবং কানাডার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের মুদ্রার মানকেও হ্রাস করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ইউরোতে আরও সংকট দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে জার্মানিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ইউরোর মূল্যকে আরও নড়বড়ে করে তুলেছে। বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ তার অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেন। যা দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর একটি বড় আঘাত। এর ফলে ইউরোর দাম এক দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে এক দশমিক ০৬৮৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত ২৭ জুনের পর সর্বনিম্ন।
এই সপ্তাহে ডলার সূচক এক দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ১০৫ দশমিক ৪৪-এ পৌঁছেছে, যা গত ৩ জুলাইয়ের পর সবচেয়ে বেশি। জাপানি ইয়েনের তুলনায়ও ডলারের দাম বেড়েছে, বুধবার এটি এক দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৪ দশমিক ৭ ইয়েনে দাঁড়িয়েছে, যা ৩০ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ।
ট্রাম্পের ক্রিপ্টোকারেন্সি-বান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিটকয়েনের মূল্যও ঊর্ধ্বগামী, যা ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬ হাজার ১৩৪ ডলারে পৌঁছেছে। ট্রাম্পের এই মনোভাব ক্রিপ্টো-বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের দুই দিনের বৈঠকের পর সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশাবাদ তৈরি করতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতিপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি ডলারের শক্তি এবং অন্যান্য মুদ্রার উপর এর প্রভাবের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। ট্রাম্পের নীতিগত পরিবর্তন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ফেডের সিদ্ধান্ত মিলিয়ে অর্থনীতির এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক গতিধারার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।