দেশের ব্যাংকিং খাতে চলমান অস্থিরতার মধ্যেই আমানতকারীদের আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, গ্রাহকদের আমানত পুরোপুরি নিরাপদ আছে এবং অপ্রয়োজনে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকিং খাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “যদি সব গ্রাহক একসঙ্গে তাদের টাকা তুলতে যান, তাহলে বিশ্বের কোনো ব্যাংকের পক্ষেই সেই অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব নয়।” সাম্প্রতিক সময়ে একসঙ্গে অনেক গ্রাহক টাকা তুলতে যাওয়ার কারণে কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমানতকারীদের প্রতি তার আহ্বান ছিল, আতঙ্কিত না হয়ে অপেক্ষা করার। কারণ প্রত্যেকেই তাদের জমাকৃত অর্থ ফেরত পাবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন হুসনে আরা শিখা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতির কারণে আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা স্থগিত থাকায় বর্তমানে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, ফলে গ্রাহকদের অর্থ প্রদানে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংকসহ ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। এই পুনর্গঠনের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবেলায় তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর মধ্যে একটি টাস্কফোর্স ব্যাংকিং খাতের সংস্কার নিয়ে কাজ করছে। যা কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। অপর একটি টাস্কফোর্স পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনি পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা প্রসঙ্গে হুসনে আরা শিখা বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে।”
তার মতে, বর্তমানে নীতি সুদহার ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে এসেছে, যেখানে আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
তিনি আরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আগামী ছয় মাসে এই হার আরও কমে ছয় শতাংশে নেমে আসতে পারে।
সর্বশেষ এই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপনে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরে, গ্রাহকদের উদ্বেগ দূর করার প্রচেষ্টা করেছে।