অক্টোবর মাসে দেশের মূল্যস্ফীতির চিত্র আবারও সাধারণ মানুষকে চরম সংকটের মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে অক্টোবর মাসে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও, গ্রাম ও শহর উভয় জায়গায়ই সাধারণ জনগণের জন্য বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
সামগ্রিকভাবে, অক্টোবর মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে, যেখানে সেপ্টেম্বরে তা ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। একইভাবে, শহরাঞ্চলেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশে।
খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি শহরে বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা এবং তামাক জাতীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। স্বল্প আয়ের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টিকর জিনিস কেনার ক্ষমতা হারাচ্ছেন।
অনেকেই তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদার অর্ধেক বা তারও কম পরিমাণ নিত্যপণ্য কিনতে পারছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে, পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
অক্টোবর মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সেটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিবিএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে সামগ্রিক মজুরি হার ৮ দশমিক ০৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ০১ শতাংশ।
কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে সামান্য মজুরি বৃদ্ধি হলেও তা বর্তমান পরিস্থিতির তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। অক্টোবরে কৃষিতে মজুরি বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ, শিল্পে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং সেবা খাতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশে।
প্রসঙ্গত, বিগত জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র আন্দোলনের কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছিল, যার প্রভাব এখনও অর্থনীতিতে বিরাজমান।
পণ্য সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুলাই মাসে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল। এর আগে, ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।