বর্তমান বিশ্বে যুবসমাজের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্বচ্ছলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল ইয়ুথ ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, যা যুবকদের মধ্যে আর্থিক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করছে। যুবকদের মধ্যে সঠিক আর্থিক ধারণা গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের নিজেদের জীবনে উন্নতি করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ পুরস্কারটি এমন উদ্ভাবনী উদ্যোগগুলিকে স্বীকৃতি দেয়, যা যুবসমাজকে আর্থিক সেবা ও সুযোগের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে এই উদ্যোগটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক যেখানে যুব জনসংখ্যার বিশাল অংশ তাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনে অবদান রাখতে সক্ষম। এই প্রতিবেদনে আমরা যুবকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা, সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণামূলকভাবে আলোচনা করব। যাতে আমরা একটি অধিকতর শক্তিশালী ও টেকসই (Sustainable) অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি। এই অ্যাওয়ার্ড একটি নতুন সম্ভাবনার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। যা যুবকদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা এবং অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করে। এই অ্যাওয়ার্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো তরুণদেরকে তাদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান প্রদান করা।
বর্তমান বিশ্বে যুবকদের ভূমিকা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। কিন্ত যুবকদের জন্য আর্থিক শিক্ষা এবং সুযোগের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবিলায় Global Youth Financial Inclusion Aoiward (GYFIA) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার, যা যুবকদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। তরুণদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে অসাধারণ অবদানের জন্য গ্লোবাল ইয়ুথ ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড- ২০২৪ অর্জন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি মধ্য আমেরিকার এল সালভাদরে অনুষ্ঠিত অ্যালায়েন্স ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন (এএফআই) গ্লোবাল পলিসি ফোরামে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। দেশব্যাপী স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে খোলা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার স্কুল ব্যাংক হিসাব। মেয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এই উদ্যোগটি আর্থিক খাতে লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয় পদক্ষেপ এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বর্তমানে ৮৪টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ ৯০টিরও বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থ মন্ত্রণালয় অ্যালায়েন্স ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন (এএফআই)-এর সদস্য। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সাল থেকে এই সংস্থার সক্রিয় সদস্য হিসেবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এই অ্যাওয়ার্ডের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, যুবকদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা বাড়ানো এবং তাদেরকে আর্থিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা। এই অ্যাওয়ার্ডের উদ্দেশ্য যুবকদের আর্থিক সেবায় প্রবেশাধিকার এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করা। এর কার্যক্রম প্রকল্প এবং উদ্যোগকে সম্মানিত করে। এটি যুবকদের মধ্যে উদ্যোক্তা মনোভাব গড়ে তুলতে আর্থিক শিক্ষা, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের অভ্যাস উন্নত করতে এবং আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে যুবকদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে সাহায্য করা এই অ্যাওয়ার্ডের মূল লক্ষ্য।
বিশ্বজুড়ে যুবকদের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক যুবক এখনও ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছেন। তাদের মধ্যে সঞ্চয় করার অভ্যাস নেই এবং বিনিয়োগের বিষয়ে সচেতনতা কম। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এই অ্যাওয়ার্ড বিভিন্ন দেশের যুবকদের উদ্ভাবনী প্রকল্প ও উদ্যোগকে উৎসাহিত করে। এই পুরস্কারের মাধ্যমে যে সমস্ত উদ্যোগ আর্থিক শিক্ষার বিস্তার ঘটায়, সেগুলোকেই বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ থেকে যুবকরা এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। অংশগ্রহণকারীদের উদ্ভাবনী প্রকল্প এবং উদ্যোগগুলো মূল্যায়ন করা হয়। যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
এই অ্যাওয়ার্ডের অর্জন ও প্রভাব: এই পুরস্কার এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে অনেক যুবক তাঁদের উদ্যোক্তা প্রকল্পের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছেন। বিভিন্ন দেশের তরুণরা নিজেদের উদ্যোগের মাধ্যমে আর্থিক শিক্ষা প্রচার করছেন, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন এবং নতুন নতুন ধারণার উদ্ভাবন করছেন। এই পুরস্কার যুবকদের মধ্যে একটি নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। যার ফলে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হচ্ছেন।
বর্তমান সময়ে যুবকদের জন্য আর্থিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে অনেক যুবক অনলাইনে আর্থিক শিক্ষা নিতে পারছেন। এ প্রেক্ষাপটে এই অ্যাওয়ার্ডের উদ্যোগ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুবকদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আর্থিক শিক্ষা প্রসারিত হচ্ছে, যা তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে। এই উদ্যোগগুলো সঞ্চয় প্রকল্প এবং বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুবকদের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং তাদের সৃজনশীলতাকে উন্মুক্ত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
পরিশেষে বলা যায়, এই গ্লোবাল ইয়ুথ ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন অ্যাওয়ার্ড একটি কার্যকর উদ্যোগ। যা যুবকদের মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করছে। যুবকদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা খুবই জরুরি এবং এই অ্যাওয়ার্ড সেই লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি শুধু যুবকদের জীবন পরিবর্তন করছে না বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। আগামী দিনে আরও বেশি যুবক এই পুরস্কারের মাধ্যমে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবেন এবং তাদের উদ্যোগ সমাজের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।