জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সম্প্রতি এক আলোচনায় দেশের স্বর্ণ আমদানি ও জুয়েলারি শিল্পের অপ্রকাশ্য কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে সোমবার (১১ নভেম্বর) তিনি বলেন, “দেশে আমদানির হিসাবে স্বর্ণের পরিমাণ খুবই সামান্য হলেও জুয়েলারিগুলোতে প্রচুর স্বর্ণ রয়েছে। স্বর্ণে ভরপুর এই জুয়েলারিগুলোতে টন টন স্বর্ণ মজুদ আছে, যা আমদানি তথ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে না। আমরা এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলেও উত্তর পাচ্ছি না।”
তার এই বক্তব্যে প্রকাশ পায়, দেশে স্বর্ণ আমদানি ও জুয়েলারি ব্যবসার মধ্যে একটি বিচ্ছিন্নতা রয়ে গেছে যা রাজস্ব বোর্ডের জন্যও রহস্যজনক এবং একইসঙ্গে উদ্বেগজনক। কারণ স্বর্ণের মতো উচ্চমূল্যসম্পন্ন সম্পদ আমদানির সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া যথাযথ শুল্ক আদায়ও কঠিন হয়ে পড়ে।
অর্থনৈতিক নীতিমালায় এনবিআরের অবস্থান নিয়ে আবদুর রহমান খান আরও জানান, দেশের স্বার্থে এনবিআর নীতিমালা প্রণয়নে সবসময়ই জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, গত তিন মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর কর ও শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। “যদিও এতে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ক্ষতি হয়েছে, তবে আমরা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের দিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি,” বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এছাড়া দেশের মানুষের মাঝে মিথ্যা হলফনামা দানের প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এই অভ্যাস অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে প্রকৃত লেনদেনের পরিসংখ্যান আসে না বরং মিথ্যা হলফনামা জমা দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। এটা জাতীয় লজ্জার বিষয়। আমরা চাই সত্যিকারের লেনদেনের অংকই রেকর্ড থাকুক।”
চেয়ারম্যানের কথায় বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কারের অঙ্গীকারও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, “আমরা এমন কোনো ব্যবস্থা চাই না, যাতে খাতির করে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। বরং আমরা এমন নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যা সবার জন্য সমান এবং ন্যায়সঙ্গত।”
এনবিআর প্রধানের এই বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, রাজস্ব ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং সঠিকতা নিশ্চিত করতে তারা বেশ কিছু সংস্কারমূলক উদ্যোগ হাতে নিতে আগ্রহী।