বাংলাদেশে বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য বড় ধরণের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করেছে, নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার (নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস) জন্য ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এই খরচ অত্যন্ত চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে যাদের শুরু থেকেই খরচ কম রাখা সম্ভব নয়, তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল মন্তব্য করেছেন, ‘সরকার মূলত ভর্তুকি হ্রাসের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে চাপ কমাতেই নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এটি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত হলেও এর প্রত্যক্ষ আর্থিক ও মানসিক প্রভাব পড়বে নতুন উদ্যোক্তাদের ওপর।’
এছাড়া ফিকি’র মতামত অনুযায়ী, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে গ্যাসের উৎপাদন খরচের বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম। দেশের শিল্পে যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে যদি নতুন গ্যাস মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য খরচ বেড়ে যায় এবং উৎপাদন কমে যায়।
যদিও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পেছনে আমদানির খরচ সমন্বয়ের যুক্তি দেওয়া হয়েছে, বাস্তবতা হলো যে অপচয় ও ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণে বিপুল পরিমাণ গ্যাস অপচয় হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩৭ কোটি ঘনমিটার গ্যাস অপচয় হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে অপচয় কমানোর চেষ্টা করা উচিত ছিল।
জ্বালানি সংকট, ব্যয়বহুল ফার্নেস ওয়েলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একসঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করার জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করছে। ফলে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে, তা বাস্তবে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
এটা স্পষ্ট যে, দেশের বৈষম্যমূলক নীতি এবং গ্যাস মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে, যা শিল্প বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।