আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবেন মূল বেতনের ১৫ শতাংশ এবং দশম থেকে বিংশ গ্রেডের কর্মীরা পাবেন ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা। এই নতুন ভাতা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই এই ভাতা পাবেন সরকারি কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মহার্ঘ ভাতার এই হার চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বাজেট ঘোষণার সময় এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত একটি কমিটি ইতোমধ্যে কাজ করছে।
সরকারি চাকরিজীবীরা ২০১৫ সাল থেকে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়তি সুবিধা হিসেবে ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা চালু করা হয়েছিল, যা এখনও কার্যকর আছে। তবে মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হলে এই বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে কর্মচারীরা পাবেন বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি মহার্ঘ ভাতা, কিন্তু বিশেষ প্রণোদনা থাকছে না।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন এই ভাতা চালুর ফলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। ফলে চলতি বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকার সঙ্গে এ খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে।
মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান চাপ থেকে সরকারি কর্মচারীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে গত ডিসেম্বরে গঠিত একটি কমিটি মহার্ঘ ভাতা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিল। সেখানে ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মীদের জন্য ২০ শতাংশ এবং ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের কর্মীদের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা প্রস্তাব করা হয়। জনপ্রশাসন সচিব ওই প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার সুপারিশ করেন।
তবে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের ঘনিষ্ঠ কিছু অর্থনীতিবিদ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণ দেখিয়ে তারা ব্যক্তিগতভাবে উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপত্তি তোলেন। সে সময় অর্থ উপদেষ্টা জানান, তখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বাজেটের ১০.৪১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যার পরিমাণ ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতির কারণে কর্মী সংখ্যা ও ব্যয়ের পরিমাণও বেড়েছে। তবে অনেক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি অবসরে যাওয়া এবং পদোন্নতি বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা।
সাধারণত প্রতি বছর বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়ে। সেই হিসাবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দ গিয়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। কিন্তু মহার্ঘ ভাতা যুক্ত হলে এই ব্যয় গিয়ে পৌঁছাতে পারে ৯৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। সরকারের জন্য এটি একটি বড় আর্থিক চাপ হলেও সরকারি কর্মচারীদের আয় বাড়লে অর্থনীতির ভোগ চাহিদা ও বাজারে অর্থপ্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।