বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও সম্প্রসারিত করতে চলতি বছর ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে দুবাইভিত্তিক বৈশ্বিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড। ভারত, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে একাধিক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল।
ডিপি ওয়ার্ল্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের নতুন প্রকল্পগুলো মূলত একটি স্থিতিশীল, আধুনিক এবং সমন্বিত লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, যা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য উৎপাদনের স্থান থেকে সরাসরি গ্রাহকের দোরগোড়া পর্যন্ত পণ্য পৌঁছে দেয়ার সক্ষমতা বাড়াতে চায়। পাশাপাশি তাদের পোর্ট নেটওয়ার্কের সামগ্রিক কার্যকারিতা ও ধারণক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান এবং গ্রুপ সিইও সুলতান বিন সুলায়েম বলেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্যের ধরন দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। স্বল্পমেয়াদে কিছু অনিশ্চয়তা থাকলেও এই ২৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ আমাদের দীর্ঘমেয়াদী আস্থার প্রতিফলন এবং বৈশ্বিক সংযোগ অটুট রাখতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার সংকল্পের প্রকাশ।” তিনি আরও বলেন, “সরবরাহ চেইন পরিষেবার বৈচিত্র্য ও ব্যাপকতার ক্ষেত্রে আমাদের তুলনায় অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।”
কানাডা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ডের। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে তারা ১০ কোটিরও বেশি টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কনটেইনার হ্যান্ডেল করেছে যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। একই বছর জানুয়ারিতে সংস্থাটি জানিয়েছিল, বৈশ্বিক কনটেইনার বাজারে তাদের অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশে যা ২০১৪ সালের তুলনায় ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
২০২৪ সালে ডিপি ওয়ার্ল্ডের মোট আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি ডলারে যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এই রাজস্ব এসেছে মূলত বন্দর ও টার্মিনাল পরিচালনা এবং নতুন অধিগ্রহণ কার্যক্রম থেকে। তবে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় একই বছর কোম্পানির নিট মুনাফা ২ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি ডলারে।
সম্প্রতি ডিপি ওয়ার্ল্ড যুক্তরাজ্যের লন্ডন গেটওয়েতে ৪৫ কোটি ডলারের একটি নতুন বার্থ প্রকল্প চালু করেছে যার ফলে প্রায় ৪০০টি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কোম্পানির ধারণা, এই প্রকল্প দশকের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় কনটেইনার বন্দরে পরিণত হবে।
এছাড়া পেরুর কালাও বন্দরে ৪০ কোটি ডলারের সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডিপি ওয়ার্ল্ড। ভারতের উত্তর-পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য গুজরাটের টুনা টেকরায় প্রতিষ্ঠানটি ৫১ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করছে। এক দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই বার্থ ও বছরে ২১ লাখ ৯০ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন টার্মিনালটি সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে ভারতের বিশাল অঞ্চলকে বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকার পাশাপাশি আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও সক্রিয়ভাবে বন্দর খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে ডিপি ওয়ার্ল্ড। কঙ্গো, সেনেগাল এবং একুয়েডরে কোম্পানিটি বর্তমানে বিভিন্ন বন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের জটিলতা এবং ভঙ্গুরতা কাটিয়ে উঠতে ডিপি ওয়ার্ল্ডের এই বিস্তৃত বিনিয়োগ পরিকল্পনা বৈশ্বিক বাণিজ্যকে আরও গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।