বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন আবারও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনের ট্রেডিংয়ে এর মূল্য প্রথমবারের মতো ১,১১,৮৮৬.৪১ মার্কিন ডলার ছুঁয়ে যায় — যা ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
এরপর কিছুটা মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণে দাম সামান্য কমে এসে দাঁড়ায় প্রায় ১,১১,০১২.০০ ডলারে, লন্ডন সময় সকাল ৭:০৩ মিনিটে — এমন তথ্য জানিয়েছে ক্রিপ্টো ডেটা ফার্ম কয়েন ম্যাট্রিক্স ।
কয়েন শেয়ার-এর গবেষণা প্রধান জেমস বাটারফিল বলেন, “এই মূল্যবৃদ্ধি এসেছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে — যেমন ইতিবাচক বাজার গতি, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো রেগুলেশন নিয়ে বাড়তে থাকা আশাবাদ, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিটকয়েন এখন শুধু বিনিয়োগ নয়, বরং মূল্য সংরক্ষণের বিকল্প মাধ্যম হিসেবেও দেখা হচ্ছে।”
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে, বিশেষ করে প্রযুক্তিখাতভিত্তিক নাসডাক সূচকে পতন দেখা যায়। সাধারণত বিটকয়েন এবং শেয়ারবাজারের চলাচল একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম — বিটকয়েন ঊর্ধ্বমুখী, শেয়ারবাজার নিম্নমুখী।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মুদ্রাস্ফীতির সময়ে বিকল্প নিরাপদ সম্পদ খুঁজছেন, আর বিটকয়েন সেই ভূমিকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি রেটিংস এজেন্সি মুডি’স যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণের রেটিং কমিয়ে দেয়। এর ফলে বাজারে আরও একটি বার্তা ছড়ায় – ডলারসহ প্রচলিত ফিয়াট কারেন্সির ওপর আস্থা কমছে, আর বিটকয়েনকে দেখা হচ্ছে সেই ঝুঁকির বিপরীতে একটি আশ্রয়স্থল হিসেবে।
জেমস বাটারফিল বলেন, “এই ঘটনাটিও বিটকয়েনকে ‘মুদ্রার অস্থিরতার বিরুদ্ধে ঢাল’ হিসেবে উপস্থাপন করার ধারনাকে জোরদার করেছে।”
সম্প্রতি জিনিয়াস অ্যাক্ট নামক একটি বিল, যা স্টেবলকয়েন নিয়ন্ত্রণে আনবে, এটি মার্কিন সিনেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগত ভোটে উত্তীর্ণ হয়েছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো নীতিমালার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার নিয়োজিত এআই ও ক্রিপ্টো উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকস একযোগে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এই পলিসিগুলোর ফলে বাজারে নতুন আস্থা ফিরে এসেছে এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব হয়েছে আরও ইতিবাচক।
বিটকয়েন নিয়ে বরাবরই সন্দিহান জেপিমর্গ্যানের সিইও জেমি ডায়মন এবার বললেন, তাদের ব্যাংক এখন ক্লায়েন্টদের বিটকয়েন কেনার সুযোগ দেবে। একজন বিটকয়েন-সংশয়ীর কাছ থেকে এমন মন্তব্য বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বিটকয়েনের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা প্রমাণ করছে যে ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন আর শুধু প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণদের খেলা নয় — এটি বিশ্বব্যাপী একটি মূলধারার আর্থিক বিকল্প হয়ে উঠছে। প্রবল আর্থিক চাপে যখন প্রচলিত বাজারগুলো নড়বড়ে, তখন বিটকয়েন হয়ে উঠছে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য আশ্রয়।