বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও জুতা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে শ্রম পরিবেশের উন্নয়ন অত্যাবশ্যক বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শিল্প সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশন (এফএলএ)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে প্রস্তাবিত শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনাকে সফল করতে হলে বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশে বাস্তবসম্মত অগ্রগতি ঘটানো এখন সময়ের দাবি বলে তারা উল্লেখ করেছে।
গত ২০ মে এই দুটি সংগঠন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে শ্রম পরিস্থিতি উন্নত করার অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে বাংলাদেশকে শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এএএফএ বিশ্বের এক হাজার ১০০টিরও বেশি শীর্ষ ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে। এসব ব্র্যান্ডে সাড়ে তিন মিলিয়নেরও বেশি কর্মী কাজ করেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক বিক্রয় পরিমাণ ৫০৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
এক যৌথ বিবৃতিতে এএএফএ প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী স্টিভ ল্যামার এবং এফএলএ প্রেসিডেন্ট জেফ ভক্রড বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, জুতা ও ভ্রমণ পণ্যের উৎপাদন খাতের বিকাশের পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার সুরক্ষিত হলে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে।”
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের বেতন-বিচার সংক্রান্ত আন্দোলনের সময় যেসব শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের দ্রুত মুক্তি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব ফৌজদারি অভিযোগ ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার এবং বাংলাদেশ স্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশনের সংগঠক জুয়েল মিয়াসহ অন্যান্য শ্রমিক নেতাদের মামলা নিষ্পত্তির দাবিও তোলা হয়।
এএএফএ ও এফএলএ আরও বলেছে, চলতি বছরের মধ্যেই পোশাক, জুতা ও ভ্রমণ পণ্যের শিল্পে স্বচ্ছ এবং বার্ষিক ভিত্তিতে নিয়মিত ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগকর্তা, সরকার এবং শ্রমিকদের বিশেষ করে স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমানভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সংগঠন দুটি শ্রম আইন সংস্কারের ওপরও জোর দিয়েছে। তারা মনে করে, শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং নিবন্ধন সহজ করতে হবে। নিবন্ধনের শর্তগুলো সহজ করা এবং অন্যায্য শ্রম অনুশীলনের জন্য আর্থিক জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে কর্মরত শ্রমিকদের পূর্ণ শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার দাবিও তোলা হয়েছে।
চিঠির শেষাংশে বলা হয়েছে, “আপনারা একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করছেন। শ্রমিক সুরক্ষা ও শিল্প খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমরা আপনাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন শুল্ক নীতি যেহেতু বাংলাদেশের রপ্তানিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি আনতে হলে এখনই শ্রম সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
উল্লেখ্য এর আগেও গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এএএফএ ও এফএলএ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরূপ চিঠি দিয়েছিল। এরপর ব্র্যান্ড প্রতিনিধিরা গত নভেম্বর ও জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষায় শ্রমিক অধিকার ও ন্যায্য পরিবেশ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব বারবার সামনে আসছে।