দেশের তৈরি পোশাক শিল্প ভয়াবহ চাপের মুখে। একদিকে ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ, ডলারের উর্ধ্বগতি, গ্যাস সংকট ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি। অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি আর ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস—সব মিলিয়ে খরচ বাড়ছে, বিক্রি কমছে। নতুন বিনিয়োগ নেই, টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। এমন প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএ জানিয়েছে, দেশের অন্তত ৬০০ পোশাক কারখানা খেলাপির ঝুঁকিতে।
এই সংকট নিরসনে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে ছয় মাস করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (গতকাল) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আগারগাঁও কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধিদল। নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
সঙ্গে ছিলেন সহসভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, সহসভাপতি শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী ও সদস্য কামাল উদ্দিন।
বৈঠকে পোশাক শিল্পের সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ ও সমাধানকল্পে একাধিক দাবি তুলে ধরেন নেতারা।
সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৯ মাস থেকে তিন মাসে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা বর্তমান বাস্তবতায় অবাস্তব। ছয় মাসে উন্নীত করা না হলে ৬০০ কারখানা ‘ক্লাসিফায়েড ঋণ’-এ পরিণত হবে, যা পুরো শিল্পকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে।
তিনি আরও জানান,
- নগদ সহায়তা ১% থেকে কমিয়ে ০.৩০%
- বিকল্প সহায়তা ৪% থেকে ১.৫% করা হয়েছে
যা শিল্পের জন্য সহায়ক নয়। তাই এই সহায়তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
এ ছাড়া,
- ১% উৎস কর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনার প্রস্তাব
- বন্ধ থাকা প্রি-শিপমেন্ট রিফাইন্যান্স স্কিম চালু করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কার্যকর রাখার আহ্বান
- একটি ফোর্সড তহবিল গঠনের প্রস্তাব—যেখান থেকে সংকটকালে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া যাবে।
বিজিএমইএ বলছে, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় কাস্টমসের জটিলতা ও বিলম্ব শিল্পের খরচ বাড়িয়ে তুলছে। লিড টাইম কমিয়ে শিল্পে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ ও হয়রানিমুক্ত করার তাগিদ দেন মাহমুদ হাসান।
বৈঠকে তীব্র গ্যাস সংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভাপতি বলেন, ভোলার নতুন গ্যাসক্ষেত্র থেকে দ্রুত গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি আমদানিও বাড়াতে হবে।
প্রতিনিধিদল জানান, মুন্সীগঞ্জে বন্ধ হওয়া গার্মেন্টস পল্লী প্রকল্প পুনরায় চালু করতে হবে। চট্টগ্রামে এসএমই কারখানার জন্য একটি পৃথক শিল্পাঞ্চল গঠনের কথাও বলেন তাঁরা।
বৈঠক শেষে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী জানান, সরকার পোশাকশিল্পের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন এবং এই খাতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।