জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে একের পর এক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ও বুধবার—টানা দুই দিন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) থেকে জারি হয় পাঁচটি পৃথক আদেশ। আদেশে চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো চারজন হলেন—
- কর গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন
- কাস্টমস নীতির সদস্য হোসেন আহমেদ
- ভ্যাটনীতির সদস্য ড. মো. আবদুর রউফ
- কর অঞ্চল বরিশালের কমিশনার মো. শব্বির আহমদ
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী এই চার কর্মকর্তার চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে—এমন যুক্তিতে ‘জনস্বার্থে’ তাঁদের অবসরে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁরা বিধিমোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ—গত ২৮ ও ২৯ জুন দপ্তর খোলা রাখার সরকারি নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বন্ধ রেখেছেন, ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে এবং রাজস্ব ক্ষতি হয়।
সেই আদেশে স্বাক্ষর করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। আদেশ অনুযায়ী, তদন্ত শেষে বিভাগীয় কার্যধারা অনুসারে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের মেয়াদে তিনি বিধি অনুসারে খোরপোষ ভাতা পাবেন।
বরখাস্ত হওয়া জাকির হোসেনের স্থানে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ ও ২৯ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সারা দেশের শুল্ক ও কর কর্মকর্তারা “কমপ্লিট শাটডাউন” কর্মসূচি পালন করেন। এতে চট্টগ্রামসহ সব কাস্টমস ও কর অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
বিশেষ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস, যা দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী দপ্তর—সেখানে গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব খাতে বড় ধাক্কা লাগে।
এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এনবিআরের ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুজন এনবিআর সদস্য এবং সংস্কার আন্দোলনের নেতা হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন—চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনের পরই এই শাস্তির তরঙ্গ শুরু হয়। শুরুতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন তা আর মানা হচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন, সামনে আরও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এই পদক্ষেপ কি শুধুই প্রশাসনিক, নাকি আন্দোলন দমন নীতির বহিঃপ্রকাশ? এনবিআরের ভেতরেই চলছে চাপা গুঞ্জন।