জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ফাইলে চাপা পড়ে থাকা এক পুরোনো কেলেঙ্কারি ফের আলোচনায় এসেছে। কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ঘোষণা দিয়ে বিপুল পরিমাণ জুয়েলারি আমদানি করা হয়। এতে প্রতি টনে কর আদায় হয় মাত্র ৩ হাজার টাকা। অথচ জুয়েলারি আমদানির নিয়মিত কর টনপ্রতি ৩ লাখ টাকা। এভাবে সরকার হারিয়েছে অন্তত ১৩ কোটি টাকার রাজস্ব।
২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৪৫০ টন কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এত পরিমাণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রয়োজন না থাকলেও চালানে ছিল আসলে জুয়েলারি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর যোগসাজশে এই অনিয়ম ঘটে।
অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার মো. মাহমুদুল হাসান এতে সরাসরি জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) কমিশনার পদে কর্মরত। তাঁর স্বাক্ষরেই আমদানির বিল অব এন্ট্রি অনুমোদিত হয়। সচরাচর এই দায়িত্ব সহকারী কমিশনাররা পালন করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কয়েক দফায় “কৃত্রিম অঙ্গ” আমদানি দেখানো হয়।
- ২১ জানুয়ারি ১৪ টন (বিল নম্বর ১২৩৭)
- ১৯ জানুয়ারি ২০.১৪ টন (বিল নম্বর ১০২২)
- ১০ ফেব্রুয়ারি ১১.৫ টন (বিল নম্বর ১৫০০)
- ৮ ফেব্রুয়ারি ১১ টন (বিল নম্বর ১৪৮৫), এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আরও কয়েকটি চালান আসে, যার সবই ছিল আসলে জুয়েলারি।
এই অনিয়মের সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- মেসার্স দিয়া এন্টারপ্রাইজ (দিনাজপুর)
- মেসার্স শুভ এজেন্সি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
- মেসার্স মায়ের দোয়া হার্ডওয়্যার স্টোর (রাজশাহী)
- মেসার্স আইডিয়া ইমপ্যাক্ট (ঢাকা)
তদন্তে আরো বেরিয়ে আসে, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মাহমুদুল হাসান এনবিআরের নির্দেশনা অমান্য করে ছয়জন সি অ্যান্ড এফ এজেন্টকে এককভাবে লাইসেন্স দেন। এই প্রক্রিয়ায় তৎকালীন লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সদস্যসচিবকে জানানো হয়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের ঘটনা দেশের অন্য কোনো বন্দরে ঘটেনি। তদন্তকারীরা একে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এই ফাইলটি দীর্ঘদিন চাপা থাকলেও সম্প্রতি এনবিআরের ভেতরে আন্দোলন ও দ্বন্দ্বের কারণে ফের আলোচনায় আসে। ১২ মে সরকার এনবিআর পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাতে আপত্তি জানিয়ে দেশব্যাপী কর্মবিরতিতে যান। এতে রাজস্ব আদায় প্রায় থমকে যায়। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ ওঠে কমিশনার মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানকারীরা বলছেন, তিনি ছিলেন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। সরকার ইতিমধ্যে আন্দোলনে জড়িত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের কমিশনার মো. মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, “আমি বিস্তারিত আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এ বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করব না।”

