কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেডের চিনিকল আধুনিকায়ন প্রকল্পটি নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কিন্তু ১৩ বছর পার হলেও প্রকল্প শেষ হয়নি। এই সময়ে কাজ সংশোধন করা হয়েছে সাতবার।
জানা গেছে, ২০১২ সালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিএমআর অব কেরু অ্যান্ড কোং (বিডি) লিমিটেড’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেন। তখন খরচ ধরা হয়েছিল ৪৬ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল পুরোনো চিনিকলটি আধুনিকায়ন করা এবং আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা। তবে কাজ সময়মতো শেষ হয়নি। সময় কয়েকবার বাড়ানো হয় এবং খরচ বেড়ে ১০২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এরপরও ১৩ বছরে পুরো কাজ শেষ হয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয় বাকি কাজ শেষ করার জন্য সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে সম্প্রতি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ২০২৬ সালের জুনে কাজ সম্পন্ন করতে।
গত রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অষ্টমবারের মতো সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। পরিকল্পনা কমিশন ও শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা স্টেশনের কাছে ১৯৩৮ সালে চিনিকলটি স্থাপন করা হয়। তখন দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ১৬ মেট্রিক টন। পরে ক্ষমতা কমে গেলে কেরু অ্যান্ড কোং চিনিকল আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০১২ সালের ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে কাজ শেষ করার সময় ধরা হয়েছিল ২০১৪ সালের জুন। খরচ ছিল ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। দুই বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এরপর একবার সময় বাড়ানো হয়, তারপর দেড় বছর বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানোর প্রস্তাব আসে।
পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই শেষে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন দেয়। তখন ৩.৫ বছর সময় বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়। খরচও বেড়ে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা হয়। এরপর প্রতিবছর এক বছর করে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, যার মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। এ পর্যন্ত সাতবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এই ১৩ বছরে খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৭৮.৩২ শতাংশ। স্থাপিত যন্ত্রপাতি দিয়ে গত ১৫-১৬ মার্চ ওয়াটার ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে শিল্প মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি পাঠায়। আইএমইডি মতামতে জানিয়েছে, বাকি কাজ শেষ করার জন্য এক বছর সময় বাড়ানো যেতে পারে। খরচ বাড়ানো যাবে না।
পরিকল্পনা কমিশন যাচাই শেষে একনেক সভায় অনুমোদনের আগে মতামত দেয়, ‘প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। যন্ত্রপাতি আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রসেস লস কমবে। এতে জনসাধারণের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিভিত্তিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়বে।’
চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) প্রকল্পে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রায় সব কাজ শেষ হলেও গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের কারণে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আসতে পারেননি। প্রোডাকশন ট্রায়াল রান সম্ভব হয়নি। তাই সময় বাড়ানো ছাড়া বিকল্প ছিল না।
কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান ও বিএসএফআইসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রশিদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এক যুগে কেরু আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়নি। তবে অন্যান্য ইউনিটের কাজ চলেছে এবং রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিকতা রয়েছে। দেশি মদ বোতলজাত করে বিক্রি হচ্ছে। আখ থেকে উৎপন্ন বাইপ্রোডাক্ট দিয়ে ভিনেগার, দেশি ও বিদেশি মদ ও জৈব সার তৈরি হচ্ছে। আখ সরবরাহ কম থাকলেও অন্যান্য ইউনিট থেকে লাভ হচ্ছে। আশা করি এবার পুরো কাজ শেষ হবে এবং আখ উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।’

