পরম্পরাগতভাবে চীনের জাহাজগুলো সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে ইউরোপ যাতায়াত করত। এবার তারা নতুন পথে, উত্তরমুখী আর্কটিক সমুদ্রপথ বেছে নিয়েছে। চীন এটিকে তাদের ‘পোলার সিল্ক রোড’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে দেখছে। এই প্রকল্প আর্কটিক অঞ্চলের মাধ্যমে নতুন বাণিজ্যিক করিডোর গড়ার লক্ষ্য রাখে।
বিশ্বব্যাপী গড়ের চেয়ে চার গুণ দ্রুত আর্কটিক অঞ্চলের বরফ গলছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে খুলছে নতুন সমুদ্রপথ। চীন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউরোপের দিকে দ্রুত মালামাল পাঠানোর নতুন পথ তৈরি করছে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চীনা কনটেইনার জাহাজ ‘ইস্তানবুল ব্রিজ’ নিংবো-ঝৌশান বন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। জাহাজে রয়েছে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি, কাপড় ও অন্যান্য পণ্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বরফমুক্ত রুট ব্যবহার করলে পণ্য দ্রুত পৌঁছাবে। এতে শিপিং খরচ কমবে এবং সরবরাহ চেইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। নিংবো কাস্টমস জানিয়েছে, নতুন রুটে দূরত্ব কমার কারণে কার্বন নিঃসরণ প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
নতুন রুটের আরেকটি সুবিধা হলো সম্ভাব্য জ্যাম এড়ানো। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা, সুয়েজ খালের সংকট এবং পানামা খালের নাব্যতা সংকট চীনের ট্রেড রুটে ঝুঁকি তৈরি করেছে। আর্কটিক পথ এই ঝুঁকি কমাতে পারে। তবে আর্কটিক রুটও ঝুঁকিমুক্ত নয়। বরফের হঠাৎ ভাঙন, নতুন আস্তরণ, বরফঝড়, কুয়াশা এবং আলো স্বল্পতা জাহাজ চলাচলে চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, কোনো দুর্ঘটনা মানবজীবন এবং পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। বরফভাঙা জাহাজ চলাচলে তেল ঝড়, শব্দ দূষণ এবং সমুদ্রে প্রাণীর জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। যত বেশি জাহাজ চলাচল করবে, বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তত বেশি।
চীন এই ঝুঁকি সত্ত্বেও আর্কটিক পথ বেছে নিয়েছে। পশ্চিমা শিপিং কোম্পানিগুলো পরিবেশগত ঝুঁকি এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণের কারণে এই পথে যাচ্ছেন না। এতে চীন আর্কটিক অঞ্চলে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রুটে সফল হলে চীন বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন দক্ষতা অর্জন করবে এবং ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কৌশলগত সুবিধা পাবে। পাশাপাশি পোলার অঞ্চলে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা কৌশলও শক্তিশালী হবে।

