বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্ভাবনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করে চলমান প্রবৃদ্ধির নতুন তত্ত্ব গড়ে তোলার জন্য ২০২৫ সালের অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ — যুক্তরাষ্ট্রের জোয়েল মকির, ফ্রান্সের ফিলিপ আগিওঁ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিটার হাওইট। সোমবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ ঘোষণা দেয়।
অর্থনীতিতে নোবেল বা আনুষ্ঠানিকভাবে “স্ভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ ইন ইকনমিক সায়েন্সেস ইন মেমোরি অব আলফ্রেড নোবেল” নামের এই পুরস্কারটি বছরের শেষ নোবেল পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটির আর্থিক মূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা, অর্থাৎ প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নোবেল কমিটি তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই তিন অর্থনীতিবিদ আমাদের শিখিয়েছেন যে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কখনোই স্বাভাবিক বা নিশ্চিত কিছু নয়। মানব ইতিহাসের অধিকাংশ সময়ই স্থবির অর্থনীতিই ছিল স্বাভাবিক বাস্তবতা। তাদের গবেষণা দেখিয়েছে, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আমাদের সবসময় উদ্ভাবনকে উৎসাহ দিতে হবে এবং স্থবিরতার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।”
জোয়েল মকির যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন এককভাবে। বাকি অর্ধেক ভাগাভাগি করেছেন ফিলিপ আগিওঁ ও পিটার হাওইট। আগিওঁ ফ্রান্সের কোলেজ দ্য ফ্রান্স এবং আইএনসিয়াড ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক, পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সেও শিক্ষকতা করেন। হাওইট যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
নোবেল কমিটির সদস্য জন হাসলার বলেন, “জোয়েল মকির ইতিহাসের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে দেখিয়েছেন কীভাবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ভিত্তিতে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়।”
অন্যদিকে, ফিলিপ আগিওঁ ও পিটার হাওইট তাদের গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন ‘ক্রিয়েটিভ ডেস্ট্রাকশন’ বা ‘সৃজনশীল ধ্বংস’-এর ধারণা—যেখানে নতুন ও উন্নত পণ্য পুরনো পণ্যকে প্রতিস্থাপন করে, এবং এই চক্রই অর্থনীতিকে ক্রমাগত এগিয়ে নেয়।
চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, শান্তি ও সাহিত্য—এই পাঁচ ক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে ১৯০১ সাল থেকে। তবে অর্থনীতিতে নোবেল তুলনামূলক নতুন; ১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। সেই বছর নরওয়ের রাগনার ফ্রিশ এবং নেদারল্যান্ডসের ইয়ান টিনবার্গেন অর্থনৈতিক মডেলিংয়ে অবদানের জন্য প্রথম এই পুরস্কার ভাগাভাগি করেন। মজার বিষয়, ইয়ান টিনবার্গেনের ভাই নিকোলাস টিনবার্গেনও নোবেলজয়ী—তিনি ১৯৭৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পান।
২০২৪ সালের অর্থনীতিতে নোবেল গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তিন গবেষকের হাতে—সাইমন জনসন, জেমস রবিনসন ও দারন আসিমোগলু। তারা উপনিবেশবাদ, প্রতিষ্ঠান গঠন এবং দারিদ্র্যের স্থায়িত্বের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন কেন কিছু দেশ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নশীল অবস্থায় আটকে আছে।
এই বছরের নোবেল বিজয়ীরা মূলত অর্থনীতিকে নতুনভাবে ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন—যেখানে প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবনই দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির ভিত্তি। তাদের তত্ত্ব শুধু অর্থনীতির বইয়ে নয়, বাস্তব নীতিনির্ধারণেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

