দেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় জামালপুরে ৪৩৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে চলতি বছরের মে মাস থেকে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে ‘ফারভেন্ট মাল্টিবোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’, যা এই অঞ্চলের একমাত্র কার্যকর প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন নিয়মিতভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহও কমছে উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইতে জামালপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। লক্ষ্য ছিল স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ, রফতানি বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি। পাঁচ বছর পর ২০২১ সালে শিল্পাঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুত হয়। গার্মেন্টস, কৃষিভিত্তিক শিল্প, মেডিকেল ও সার্জিক্যাল আইটেমসহ ২২টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এর মধ্যে নয়টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। আটটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এখনো চালুর অপেক্ষায়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো চার বছর পার হলেও এই অঞ্চলে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান। বারবার বিদ্যুৎ সংকটে সেটিরও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংযোগও এখনও মেলেনি।
খোঁজে জানা যায়, পার্টিক্যাল বোর্ড উৎপাদন করতে ফারভেন্ট মাল্টিবোর্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রাথমিকভাবে ৬০ একর জমি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করছে ৩৫ একর জমি। প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য থাকলেও এখনকার কর্মী সংখ্যা মাত্র ৭০০।
কারখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদন অনিশ্চয়তার মধ্যে। দৈনিক উৎপাদনের লক্ষ্য ৯০০ ঘনমিটার হলেও বিদ্যুৎ ও গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩০০ ঘনমিটার। ফলে উৎপাদন ব্যয় ও অন্যান্য খরচ মেটাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখেও পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।
চিফ অপারেটিং অফিসার মাহমুদুল ইসলাম বণিক বলেন, ‘সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগসহ সব সুবিধা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা দেয়। আমরা এখানে বেজার মাধ্যমে জমি নিয়ে ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রায়ই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, এতে মেশিনের ক্ষতি হয় এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। নতুন ইউনিটও পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানি দুর্বল হবে। ব্যাংকও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারীরা অনুৎসাহিত হবে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করুন।’
কারখানার তথ্য অনুযায়ী, পূর্ণ উৎপাদনের জন্য ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু পল্লী উন্নয়ন বোর্ড সরবরাহ করছে মাত্র ৩ মেগাওয়াট। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে গ্যাস সংযোগের আবেদন করা হলেও এখনো তা মেলেনি। এছাড়া কারখানার প্রধান সড়কের অবস্থা নাজুক।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের সহকারী পরিচালক রুবাইয়াত ইসলাম সিফাত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বেজার প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’ বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বিদেশে থাকায় একজন নির্বাহী সদস্য বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয় অত্যন্ত সংবেদনশীল, মন্তব্য সম্ভব নয়।’
জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কারখানায় চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে।’ তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (প্রকৌশলী) দুর্জয় খকশী বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।’