ম্যানিলাভিত্তিক এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আগামী বছরগুলোয় বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এর ফলে আরও বেশি মানুষ উপকৃত হতে পারবেন। এ কথা বলেছেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং। তিনি পটুয়াখালী ও খুলনায় এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনের সময় এই মন্তব্য করেন।
জিয়ং বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একেবারে স্পষ্ট। আমরা চলমান প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে চাই এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সফল উদাহরণগুলো পুনরায় বাস্তবায়ন করতে চাই। যাতে আরও বেশি পৌরসভা, শহর এবং সাধারণ মানুষ এডিবির সহায়তা থেকে উপকৃত হতে পারেন। ভবিষ্যতে এডিবির অর্থায়ন সরকারের সঙ্গে আলোচনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।”
পটুয়াখালী পৌরসভা ও খুলনার চালনা পৌরসভায় প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এডিবি বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের পৌরসভাগুলোকে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই সফর আমাকে প্রকল্প ও বিনিয়োগের প্রকৃত প্রভাব সরাসরি দেখার সুযোগ দিয়েছে। এটি শহর, অঞ্চল এবং মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। ভবিষ্যতে আমরা সরকার, পৌরসভা ও নগর প্রশাসনসহ প্রধান অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব। ক্ষুদ্র বিনিয়োগ হলেও এর উন্নয়নমূলক প্রভাব উল্লেখযোগ্য। এডিবি এ ধরনের প্রকল্পে ধারাবাহিক সহায়তা প্রদান করবে।”
উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, “চলমান ‘কোস্টাল টাউন ক্লাইমেট রিজিলেন্স’ প্রকল্পের লক্ষ্য হলো উপকূলীয় শহর ও পৌরসভায় লবণাক্ততা সমস্যা মোকাবিলা করা। এখানে শুধু লবণাক্ততার ওপর নয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করাও গুরুত্বপূর্ণ। যাতে স্থানীয় মানুষ সরাসরি উপকৃত হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নগর উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতা বাড়াবে এবং সংশ্লিষ্ট পৌরসভাগুলোর সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়ানো হবে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই উপকূলীয় পৌরসভা ও শহর এলাকায় ধারাবাহিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের সমন্বিত কাঠামো শহর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরও বেশি অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক প্রভাব বয়ে আনবে।”
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে ২০২৬ সালে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বড় অঙ্কের সহায়তা আসতে পারে। এটি অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আগামী বছর অন্তত ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিতে পারে।”
ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটি সম্প্রতি তাদের ২০২৬ সালের ‘কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন’ (সিপিএম)-এ এই অর্থায়ন পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এছাড়া এই ১০টি প্রকল্পের বাইরে বাংলাদেশের জন্য জরুরি বা অগ্রাধিকারমূলক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘স্ট্যান্ডবাই তহবিল’ রাখা হবে।
ইআরডি জানায়, বাংলাদেশে এডিবি দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদার। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) এডিবি ২.৫২ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে এবং ২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশের এডিবি পোর্টফোলিওতে ৫১টি চলমান প্রকল্প রয়েছে যার মোট মূল্য প্রায় ১১.৮ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭৩ সাল থেকে এডিবি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, স্থানীয় সরকার, পরিবহন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, পানি সম্পদ ও সুশাসনসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৩৩.৯৫১ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও ৫৭১.২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে।

