দেশের বেসরকারি খাত সেপ্টেম্বর মাসে আগের মাসের তুলনায় সামান্য পরিমাণে বেশি বিদেশি ঋণ নিয়েছে। তবে ঋণের এই বৃদ্ধি এখনো খুবই সীমিত, যা দেশের বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতির স্থবির চিত্রই ফুটিয়ে তোলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। আগস্টের শেষে এই পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক মাসে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৬৮ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক খাতের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সামান্য ঋণ বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও এটি কোনো বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত নয়। একসময় যেখানে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি, সেখানে এখন তা সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু ওপরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আগের নেওয়া ঋণগুলোর পেমেন্ট চলমান থাকায় নতুন ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম দেখাচ্ছে।
তার ভাষায়, “বিদেশি ঋণ সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদি হয়। মেয়াদ পূর্ণ হলে পরিশোধ করতেই হয়। ফলে একদিকে ঋণ পরিশোধ হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন ঋণ আসছে— কিন্তু নিট হিসেবে তেমন বড় বৃদ্ধি দেখা যায় না।”
অন্যদিকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট লাইন সংকুচিত হয়ে যাওয়াও বড় কারণ। “বিদেশি ব্যাংকগুলো এখন আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা এখন অনেক বেশি সতর্ক, ফলে স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রবাহও ধীর,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা জানান, দেশে নতুন বিনিয়োগ কার্যত স্থবির হয়ে আছে। ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা বিদেশে চলে গেছেন, বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর প্রকল্প থেমে আছে। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, আর তার সঙ্গে কমেছে বায়ার্স ক্রেডিটও।
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে এ পরিস্থিতি বিশেষ পরিবর্তন হবে না। তবে নির্বাচন হলে বিনিয়োগ বাড়বে, তখন বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণও বাড়তে পারে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের শেষে দেশের স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। এক বছর পর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষে তা কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে, আর ২০২৪ সালের শেষে তা আরও কমে হয় ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে, যা বিনিয়োগে অনাগ্রহের স্পষ্ট ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, টাকার মানের স্থিরতা ও ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে জরুরি।

