বাংলাদেশে শিল্প খাতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছে দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। গাজীপুরের চন্দ্রায় প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এক মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে ওয়ালটন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব শিল্পোৎপাদনের পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।
জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ওয়ালটনের এই উদ্যোগকে শিল্প খাতে সবুজ উন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। উৎপাদন প্রক্রিয়া ও কর্মপরিবেশে সবুজ নীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে শিল্প খাতে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
ওয়ালটনের ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একই সঙ্গে মাছ চাষ, ভূমি সংরক্ষণ, পানির বাষ্পীভবন রোধ এবং পরিবেশ সুরক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কারখানা বন্ধ বা আংশিক উৎপাদনের সময় প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ‘নেট মিটারিং’ ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। ফলে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ওয়ালটনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ প্রকল্প বাংলাদেশের শিল্প খাতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে। তাদের ভাষায়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নই ভবিষ্যতের টেকসই শিল্পায়নের মূল চাবিকাঠি এবং ওয়ালটনের এ উদ্যোগ তারই বাস্তব প্রতিফলন।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, ওয়ালটনের টেকসই উদ্যোগগুলো এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ১১ হাজার ৮২৩ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমিয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্বন ফুটপ্রিন্ট ১০ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। এই সাফল্যের মাধ্যমে ওয়ালটন বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব শিল্প কার্যক্রমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে।
দেশে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলা এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বেসরকারি খাতে ওয়ালটনের এই উদ্যোগ সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। ওয়ালটনের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রাজু বলেন, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে ওয়ালটন নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই শিল্পায়নের পথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। ভাসমান এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প দেশের টেকসই শিল্প উন্নয়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ।”
তিনি আরও জানান, “প্রকল্পটি কেবল পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনই করছে না, বরং মাছ চাষ, ভূমি সংরক্ষণ, পানির বাষ্পীভবন হ্রাস এবং সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষায়ও অবদান রাখছে। নিজস্ব ব্যবহারের চাহিদা পূরণের পর ওয়ালটন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে নেট মিটারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে।”

