উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণে এবারও বড় কাটছাঁট হচ্ছে সরকারি উন্নয়ন বাজেটে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) দুই লাখ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, এডিপি থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ-১ পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির অর্থায়নের উৎসভিত্তিক বিভাজন নিশ্চিত করার জন্য। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে সরকারের অর্থায়ন বা স্থানীয় মুদ্রায় বরাদ্দ এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা প্রকল্পের ঋণ ও অনুদান ধরা হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা।
বাজেট অনুবিভাগের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রকল্পে ব্যয় কম হবে, তাদের জিওবি বরাদ্দ হ্রাস করতে হবে। তুলনামূলকভাবে কম অগ্রগতি থাকা প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে উচ্চ অগ্রাধিকারসম্পন্ন প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার মতো প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে।
এর আগে ২ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশনে বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পগুলোর ঋণ ও অনুদান বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য একাধিক পর্যালোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই পর্যালোচনার ভিত্তিতে সংশোধিত উন্নয়ন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিহাসে এবারই প্রথম ডিসেম্বরের মধ্যেই আরএডিপি চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, জাতীয় নির্বাচনের আগে উন্নয়ন বাজেটের কাঠামো ও বরাদ্দপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, যাতে নির্বাচনের বছরেও প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি অব্যাহত থাকে।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৫.৬৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি, শিক্ষা খাত ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি, গৃহায়ণ ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি এবং স্বাস্থ্য খাত ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
সম্প্রতি একনেক বিফ্রিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “গত বছর নানা কারণে অনেক প্রকল্পে বাস্তবায়নের গতি কমে গিয়েছিল। এবার সেই অজুহাত চলবে না। নির্বাচনের আগে আমরা চাই আরএডিপি সময়মতো চূড়ান্ত হোক, যাতে উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আসে।”

