সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রতিবছর তাদের আয় ও ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। দশম গ্রেড বা তার উপরের পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ, রিটার্ন না দিলে বেতন ও ভাতা গ্রহণে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আয় হিসাব দিতে হয়। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত আছে। উদাহরণ হিসেবে জাহিদ কবিরের হিসাব দেখা যাক। ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি আগের এক বছরের আয়ের হিসাব দেবেন।
জাহিদ কবিরের মাসিক মূল বেতন ২৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া তিনি দু’টি উৎসব বোনাস হিসেবে ২৬ হাজার টাকা করে মোট ৫২ হাজার টাকা পান। চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা ৫০০ টাকা এবং বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪,৪০০ টাকা। তিনি রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায় থাকেন।
ভবিষ্য তহবিলে জাহিদ কবির প্রতি মাসে ৩,২০০ টাকা জমা রাখেন। হিসাবরক্ষণ অফিসের প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী, ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে তহবিলে অর্জিত সুদের পরিমাণ ছিল ২৯,৫০০ টাকা। কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে প্রতিমাসে বেতন থেকে যথাক্রমে ১৫০ ও ১০০ টাকা কর্তন হয়। এইভাবে সব উপার্জন, ভাতা এবং তহবিলের অবদান হিসাব করে জাহিদ কবির তার আয়কর রিটার্ন পূরণ করবেন।
২০২৫–২৬ করবর্ষে জাহিদ কবিরের মোট আয় হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা (২৬ হাজার টাকার ১২ মাস) এবং উৎসব বোনাস ৫২ হাজার টাকা। চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা, শিক্ষাসহায়ক ভাতা ৫০০ টাকা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪,৪০০ টাকা তাঁর জন্য করমুক্ত। কারণ এই ভাতাগুলো সরকারি চাকরিতে প্রযোজ্য বেতন ও ভাতাদি আদেশ, ২০১৫–এর অন্তর্ভুক্ত।
করযোগ্য আয়: বেতন ও উৎসব বোনাস মিলিয়ে মোট ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
কর দায়: প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপর কোনো কর নেই। তাই করযোগ্য আয় ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ওপর কর বসবে মাত্র ১৪ হাজার টাকার ওপর।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত: জাহিদ কবির ভবিষ্য তহবিলে বছরে ৩৮,৪০০ টাকা, কল্যাণ তহবিলে ১,৮০০ টাকা এবং গোষ্ঠী বিমা তহবিলে ১,২০০ টাকা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ ৪১,৪০০ টাকা।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত নেওয়ার নিয়ম: মোট আয়ের ০.৩%, অনুমোদিত বিনিয়োগের ১৫%, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা।
জাহিদ কবিরের ক্ষেত্রে ,মোট আয়ের ০.৩% = ১০,৯২০ টাকা, অনুমোদিত বিনিয়োগের ১৫% = ৬,২১০ টাকা, সর্বোচ্চ সীমা = ১০ লাখ টাকা। সর্বনিম্ন হলো ৬,২১০ টাকা। তাই জাহিদ কবিরের প্রাপ্য রেয়াতের পরিমাণ ৬,২১০ টাকা।
কর রেয়াতের প্রভাব: জাহিদ কবিরের মোট কর দায় ৭০০ টাকা। বিনিয়োগজনিত রেয়াত ৬,২১০ টাকা হলেও, রেয়াত কখনো করদায়ের বেশি হতে পারে না। ফলে করের চূড়ান্ত পরিমাণ ৭০০ টাকা।
ন্যূনতম কর: আইন অনুযায়ী, জাহিদ কবির ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ বা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতা হলে ন্যূনতম কর ৫,০০০ টাকা। তাই তাঁর শেষ কর ৫,০০০ টাকা নির্ধারিত হবে।

