জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেশের বন্ড ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও গতিশীল করতে ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যুর পুরো প্রক্রিয়াকে অনলাইনভিত্তিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিবিএমএস) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
গতকাল এনবিআর আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ শীর্ষক বৈঠকে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, অ্যাকসেসরিজ, টেক্সটাইল ও লেদারগুডস খাতের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিএপিএইএ, বিটিএমএ ও এলএফএমইএবির প্রতিনিধিরাও একমত হয়েছেন।
জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে এনবিআর সিবিএমএস সফটওয়্যার চালু করেছে। বর্তমানে তিনটি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে সফটওয়্যারের ২৪টি মডিউল ব্যবহার করে অনলাইনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির জন্য সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে ইউপি গ্রহণ করে।
তবে, সিবিএমএসের ইউপি মডিউল চালু হলেও এখনো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ইউপি নিচ্ছে। সফটওয়্যার ব্যবহার বাধ্যতামূলক না হওয়ায় গত ১০ মাসে এর ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। সিবিএমএস ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে সিস্টেমে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সংশোধন করে আরও ব্যবহারবান্ধব করা হয়েছে।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘রফতানি সম্পন্ন হওয়ার পর মূল্য, ওজন বা বর্ণনা সংশোধনের আইনগত সুযোগ নেই। সময় চলে যাওয়ার পর অনুরোধ আসে, যা সমস্যা তৈরি করে। কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করবে সময়মতো সবাই ঠিকঠাক কাজ করতে পারে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ হবে।’
তিনি জানান, উপচুক্তির কাজ চালানোর জন্য পূর্বানুমোদন নেওয়ার শর্ত সংশোধন করে আগের মতো কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন উপচুক্তির কাজ করে, তখন ভিন্ন কমিশনারের অনুমোদন নিতে হয়। তবে সব প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চলে এলে এটি আর প্রয়োজন হবে না। একই সঙ্গে কাজের এলাকা সংক্রান্ত জটিলতাও থাকবে না।
আব্দুর রহমান খান বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে সব তথ্য সংগ্রহ করা হলে অনিয়ম সহজে দেখা যাবে এবং সততা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা বা পাওনা দাবি নিষ্পত্তি না হলে ব্যাংক জিম্মার বদলে বিজিএমইএর সুপারিশসহ অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়টি আগামী বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনায় (বাজেটে) পর্যালোচনা করা হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, মোট কর সংগ্রহের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে উৎসে কর্তন থেকে। এ কারণে রাজস্বে ঘাটতি হলে চলবে না। কর্মকর্তারা যদি প্রতি বছর হিসাব নিরীক্ষা (অডিট) করতেন, তাহলে একসঙ্গে বহু বছরের চাপ তৈরি হতো না। এই চাপ যাতে ব্যবসা বন্ধের পর্যায়ে না যায়, সেজন্য কমিশনারকে নির্দেশনা দিতে হবে।
তিনি জানান, রফতানির বিপরীতে ১ শতাংশ উৎসে কর কর্তনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে কিনা, তা আগামী বাজেটে নতুন সরকার বিবেচনা করবে। বিদেশী ঋণের সুদের ওপর কর মওকুফ দেওয়া আপাতত সম্ভব নয়। এছাড়া স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ বার্ষিক আমদানির সীমা থেকে বাদ দেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে আগামী বাজেটে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৈঠকে অতি দ্রুততার সঙ্গে, সম্ভব হলে ১ ডিসেম্বর থেকে ইউপি ইস্যুসংক্রান্ত সব সেবা গ্রহণ ও প্রদানের জন্য সিবিএমএস ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এনবিআর শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করবে।

