করছাড়ের ক্ষমতা আর এনবিআর বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে না। এখন থেকে কোন খাতে কতটা করছাড় দেওয়া হবে বা আদৌ দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদ। এমন তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে গতকাল রবিবার আয়োজিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, করব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করতেই নতুন নীতি-কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আয়কর আইন ও কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট সব বিধান সংশোধন করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ করছাড় আর প্রশাসনিকভাবে নির্ধারিত হবে না; তা হবে সংসদীয় নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে, জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী।
বিদেশি উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণের সুদের ওপর করমুক্তি প্রদানের প্রস্তাব থাকলেও বর্তমান নীতিতে তা এখন বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদেশি যে ঋণ দিয়েছে, তার সুদের ওপর করছাড় দেওয়া আপাতত সম্ভব নয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ, জনগণ ঠিক করবে।’
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ও বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বন্ডের অপব্যবহারে যারা জড়িত তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। কারণ এর ক্ষতি বহন করতে হয় নিয়ম মেনে চলা ব্যবসায়ীদের। তিনি অপব্যবহারকারীদের পরিচয় প্রকাশ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া বলেন, বন্ড লাইসেন্সে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এইচএস কোড নিয়ে অযথা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বছর শেষে পূর্ণাঙ্গ হিসাব দেওয়ার সময় এইচএস কোডজনিত ভুলকে মিথ্যা ঘোষণা হিসেবে দেখার প্রবণতা অনুচিত। তাই এইচএস কোড সম্পর্কিত বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী কর্মকর্তাদের ঘন ঘন বদলির কারণে ফাইল দীর্ঘদিন আটকে থাকে। ছোট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়াও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, কারও অদক্ষতা প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুত করা হবে। পণ্যের এইচএস কোডজনিত বিলম্ব রোধে কাস্টমস পুরোপুরি অনলাইনে আনা হবে। এটি সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যুতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত ও স্বচ্ছ সেবা দেওয়ার জন্য কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিবিএমএস) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে তিনটি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে ২৪টি মডিউল ব্যবহার করে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
‘মিট দ্য বিজনেস’ আলোচনায় গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও লেদারগুডস খাতের শীর্ষ সংগঠনগুলো (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিএপিএমইএ, বিটিএমএ, এলএফএমইএবি) এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ইউপি-সংক্রান্ত সব সেবা বাধ্যতামূলকভাবে সিবিএমএসের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। এনবিআর শিগগিরই আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা জারি করবে।

