রাশিয়া এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার আওতায় দুই দেশ পারস্পরিক পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি তাস নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে কমলা ও চালের বিনিময়ে রাশিয়া ছোলা ও মসুর ডাল সরবরাহ করবে। এই চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে নিষেধাজ্ঞার জটিলতা এড়িয়ে রাশিয়া নতুনভাবে বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে, যা রাশিয়ার অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। মূলত আর্থিক লেনদেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কোম্পানিগুলো চীন ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের নতুন পথ খুঁজতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে রাশিয়ান কোম্পানি এস্টো এগ্রো ট্রেডিং, পাকিস্তানের মিসকে এন্ড ফিমটে ট্রেডিং এর সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, রাশিয়া পাকিস্তানকে ২০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা সরবরাহ করবে এবং তার বিনিময়ে পাকিস্তান একই পরিমাণ চাল রপ্তানি করবে। এছাড়া, রাশিয়া ১৫ হাজার টন ছোলা এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল সরবরাহ করবে, যার বদলে পাকিস্তান থেকে আসবে ১৫ হাজার টন কমলা ও ১০ হাজার টন আলু। এই চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত পণ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় একটি বিকল্প পথ তৈরি করেছে।
তবে শুধু পাকিস্তান নয়, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ-রাশিয়া বাণিজ্যের ওপরও। বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ঋণ প্রদানকারী রাশিয়ান ব্যাংক ভিইবি.আরএফ গত ২১ আগস্ট বাংলাদেশকে একটি চিঠিতে জানিয়েছে, ৬৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সুদ ও বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এ অর্থ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংক অব চায়নার সাংহাই শাখায় জমা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে সমস্যা হলো, ব্যাংক অব চায়না নিজেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত, ফলে বাংলাদেশ চাইলেও ওই অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে নিয়মিতভাবে ঋণের সুদ পরিশোধ করে আসছিল বাংলাদেশ। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ান ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে এই প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। নিয়মিত সুদ জমার পাশাপাশি বকেয়া সুদের ওপর জরিমানা সুদও যোগ হতে থাকে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
রাশিয়া-পাকিস্তানের নতুন এই চুক্তি এক ধরনের কৌশলগত পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার বাধা অতিক্রম করে দুই দেশ বিকল্প পথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশও চীনের মতো বিকল্প পথে অর্থ লেনদেনের চিন্তা করতে পারে, যদি নিষেধাজ্ঞার কারণে আর্থিক লেনদেনের সমস্যা আরো দীর্ঘায়িত হয়।