বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হতে যাচ্ছে মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) বা ড্রোন। দেশের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তিখাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে ‘স্কাই বিজ’ নামে একটি কোম্পানি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মূলত বিদেশে রপ্তানির জন্য উন্নত মানের ড্রোন তৈরি করবে প্রতিষ্ঠানটি। আজ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সঙ্গে জমির চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে স্কাই বিজ, যা তাদের ড্রোন কারখানা স্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের বেপজা ইনডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে গড়ে উঠবে এই কারখানা। প্রতিষ্ঠানটি এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ‘স্কাই বিজ’ আশা করছে, আগামী বছরের শুরুতেই বাণিজ্যিকভাবে ড্রোন উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। তাদের লক্ষ্য, প্রতি বছর ১৬৯ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ড্রোন রপ্তানি করা।
এই বিশাল প্রকল্পের পেছনের উদ্যোক্তা জসীম আহমেদ, যিনি একজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী। ঢাকা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডে তার গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল খাতের ব্যবসা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি স্পেন-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ‘গ্লোবাল লেভেলস বাংলাদেশ লিমিটেড’ এবং চীন-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ‘জিনকিউ গ্লোবাল টেক্সটাইল বাংলাদেশ লিমিটেড’। জসীম আহমেদ এবার ভবিষ্যতের চাহিদা মাথায় রেখে আধুনিক প্রযুক্তির ইউএভি তৈরিতে বিনিয়োগ করছেন।
তার মতে, এই প্রকল্পটি অনেক স্বপ্নবাজ এবং আত্মবিশ্বাসী তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করছে। তিনি মনে করেন, দেশের প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি এবং দক্ষ জনশক্তি ব্যবহার করে এই ধরনের উন্নতমানের ড্রোন উৎপাদন সম্ভব।
প্রাথমিকভাবে স্কাই বিজ অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রোটারি উইং ইউএভি তৈরি করবে। এছাড়াও সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং এবং সার্ভিলেন্সের জন্য ভার্টিক্যাল টেক-অফ ও ল্যান্ডিং ড্রোন তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
জসীম আহমেদ জানান, তাদের তৈরি ড্রোনগুলি মূলত বেসামরিক কাজ যেমন কীটনাশক স্প্রে করা, অগ্নিনির্বাপণ, ডেলিভারি সার্ভিস এবং ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমে ব্যবহার করা যাবে। ভবিষ্যতে এই ড্রোনগুলি শিল্প খাতে এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত প্রয়োজনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হবে বলে তিনি আশা করছেন।
বেপজার কাছে স্কাই বিজ যে প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে, তাতে বছরে ৭ হাজার ৩১৪টি ড্রোন উৎপাদন ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে। বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এএসএম আনোয়ার পারভেজ এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা জমি ইজারা দিতে স্কাই বিজের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশের ড্রোন শিল্পের অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।”
এই প্রকল্পটি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক প্রযুক্তি বাজারে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশীয় শিল্পখাতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।