চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৮ হাজার ২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা লাগে; এই মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। তবে আগস্ট মাস থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বরে এই প্রবাহ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকার সমান। এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, জুন মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৫৪১ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৬৩ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা।
আগস্ট মাসে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬২ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। সেপ্টেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, এই সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার বা ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যা গড়ে ১২০ টাকার বিনিময় হারে হিসাব করা হয়েছে।
রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত শীর্ষে রয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রবাসী আয় এসেছে ১০৩ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার ডলার। জুলাই মাসে এই পরিমাণ ছিল ৩৩ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আগস্টে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারে এবং সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে ৩৬ কোটি ১৮ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই দেশে প্রবাসী আয় আসে ৯২ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। জুলাই মাসে আসে ২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার, আগস্টে ২৯ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং সেপ্টেম্বরে ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াও রেমিট্যান্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশ হিসেবে পরিচিত। সৌদি আরব থেকে জুলাই মাসে ২৪ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগস্ট মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারে এবং সেপ্টেম্বরে আরও বাড়ে ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। মালয়েশিয়া থেকে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩ কোটি ৬ লাখ ডলার, আগস্টে ২৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার এবং সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
চলতি অক্টোবর মাসেও রেমিট্যান্সের প্রবাহে ইতিবাচক ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। অক্টোবরের প্রথম ৫ দিনে দেশে এসেছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের অক্টোবরে এই সময়ের মধ্যে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, অক্টোবর মাসের শুরুতেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এই প্রবাহ অব্যাহত থাকলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০ সালের জুলাই মাসে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স আসে, যা ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৫৪ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে, জুলাই মাসে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। জুন মাসে রেমিট্যান্স ছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ডলার এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
এই প্রবাহ দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সুসংবাদ, যা প্রবাসী আয়ের উপর ভিত্তি করে জাতীয় উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে।