নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত হিসাবে উঠে এসেছে সদ্যসমাপ্ত ২০২৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স উজ্জ্বল না হলেও, দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি তার অসাধারণ ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। ফলস্বরূপ, তিনি বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন। নিগারকে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে, যা তার প্রতিভার প্রমাণ দেয়।
বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড প্রথমবারের মতো মেয়েদের ২০ ওভারের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরপরই, আইসিসি সোমবার সেরা একাদশের নাম ঘোষণা করে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে টুর্নামেন্ট শুরু করে নিগার, যেখানে তিনি ১৮ রান করেছিলেন। যদিও সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায়, পরবর্তী তিনটি ম্যাচে দলের বিপর্যয় ঘটে। নিগার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩৯ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংস খেলে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উইকেটের পেছনেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত চটপটে, যেখানে তিনি ছয়টি স্টাম্পিং ও একটি ক্যাচ ধরার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
সেরা একাদশে স্থান পাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার তিনজন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন দুই ওপেনার লরা উলভার্ট ও টাজমিন ব্রিটস এবং পেসার ননকুলুলেকো এমলাবা। লরা উলভার্টকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যিনি টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচ খেলে ২২৩ রান করার পাশাপাশি ৪৪.৬০ গড় ও ১১৩.১৯ স্ট্রাইক রেটে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন।
শিরোপাজয়ী নিউজিল্যান্ডের পক্ষ থেকে সেরা একাদশে স্থান পেয়েছেন অলরাউন্ডার অ্যামিলিয়া কার ও পেসার রোজমেরি মেয়ার। ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি, অ্যামিলিয়া টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছেন। তিনি ব্যাট হাতে ১৩৫ রান এবং লেগ স্পিনে ১৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন, যা বিশ্বকাপের এক আসরে কোনো বোলারের সর্বাধিক উইকেট শিকার করার নজির।
এছাড়াও, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ক্রিকেটার—অলরাউন্ডার ডিয়ান্ড্রা ডটিন ও স্পিনার অ্যাফি ফ্লেচার—এই সেরা একাদশে স্থান পেয়েছেন। সব মিলিয়ে সেরা একাদশে সাত দেশের ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশের নিগার সুলতানার পাশাপাশি অন্যান্য ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটার ড্যানি ওয়াট-হজ, ভারতের ব্যাটার হারমানপ্রিত কৌর এবং অস্ট্রেলিয়ার পেসার মেগান শাট।
২০২৪ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা একাদশ হল:
লরা উলভার্ট (অধিনায়ক, দক্ষিণ আফ্রিকা), টাজমিন ব্রিটস (দক্ষিণ আফ্রিকা), ড্যানি ওয়াট-হজ (ইংল্যান্ড), অ্যামিলিয়া কার (নিউজিল্যান্ড), হারমানপ্রিত কৌর (ভারত), ডিয়ান্ড্রা ডটিন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), নিগার সুলতানা (উইকেটরক্ষক, বাংলাদেশ), অ্যাফি ফ্লেচার (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), রোজমেরি মেয়ার (নিউজিল্যান্ড), মেগান শাট (অস্ট্রেলিয়া), ননকুলুলেকো এমলাবা (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
দ্বাদশ খেলোয়াড়: ইডেন কার্সন (নিউজিল্যান্ড)।
এখন নিগারের এই সাফল্যকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের উন্নয়নের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছে। নিগার সুলতানা জ্যোতির মতো ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স নারী ক্রিকেটকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে এবং ভবিষ্যতে দেশের জন্য গর্বের একটি উৎস হিসেবে কাজ করবে।