অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দারুণ এক জয় তুলে নিল পাকিস্তান। ১৪১ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। বাবর আজমের নেতৃত্বে পাকিস্তান এই ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। মেলবোর্নে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ২০৩ রানে আটকে দিয়ে জয় তুলে নেওয়া অস্ট্রেলিয়ার জন্য এটি ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত এক পরাজয়। মাত্র ১৬৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর জশ ইংলিসের দল আশাবাদী থাকলেও শফিক ও সাইম আইয়ুবের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কাছে তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ম্যাচের শুরুতে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে কোনো জুটিই স্থায়ী হয়নি। স্টিভ স্মিথ ও জশ ইংলিসের চতুর্থ উইকেটে ৩৮ রানের জুটি ছিল সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন স্মিথ। শাহিন আফ্রিদির ভয়ানক বোলিংয়ের পর বোলিং তোপে মূলত অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন ধসিয়ে দেন হারিস রউফ। অসাধারণ বোলিংয়ে মাত্র ২৯ রানে তুলে নেন ৫ উইকেট। শাহিন আফ্রিদি নেন ২৬ রানে ৩টি উইকেট। ফিল্ডিংয়ে রিজওয়ানের অবদানের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ্য। উইকেটের পেছনে তিনি এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ৬টি ক্যাচ নেন, যা তাকে এই রেকর্ডের অংশীদার বানায়। তবে একটি ক্যাচ হাতছাড়া না করলে রেকর্ডটি এককভাবে তারই হতো।
মাত্র ১৬৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান নিজেদের স্বপ্নের মতো শুরু পায়। আবদুল্লাহ শফিক ও সাইম আইয়ুবের উদ্বোধনী জুটি অস্ট্রেলিয়াকে দ্রুতই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। সতর্ক শুরু করার পর শফিক দশম ওভারে জশ হ্যাজলউডকে টানা দুই চারে স্কোরের গতি বাড়ান। তবে আসল ঝড় তোলেন সাইম আইয়ুব। কামিন্স ও স্টার্কের বল তাণ্ডবে ফেলে ছক্কা ও চারের বন্যায় নিয়ে যান। ফাইন লেগ দিয়ে ফ্লিকে মারা এক ছক্কাটি দর্শকদের মনে দাগ কেটে যায়, যা হয়তো দিনের সেরা শট হিসেবেও স্বীকৃতি পাবে।
মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এদিন জাম্পা ও হার্ডির বলেও জোড়া ছক্কা মারেন। ৭১ বল খেলে তিনি তুলে নেন ৮২ রান, যেখানে ছিল ৬টি ছক্কা ও ৫টি চারের মার। ১৬তম ওভারেই পাকিস্তানের স্কোর ছুঁয়ে ফেলে ১০০ রান। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটি পাকিস্তানের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি জুটি। ১৯৮৪–৮৫ মৌসুমে মহসিন খান ও মুদাসসর নজর প্রথম এই কীর্তি গড়েন এমসিজিতে।
অবশেষে, জাম্পার বলে ক্যাচ আউট হয়ে থামেন আইয়ুব। তার ৮২ রানের ইনিংসের পর পাকিস্তানের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা ছিল। ১৩৭ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর অধিনায়ক বাবর আজম নিজেকে দায়িত্বশীলভাবে ধরে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেন এবং এক দৃষ্টিনন্দন ছক্কায় খেলা শেষ করেন।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তানের জন্য এটি ছিল এক স্মরণীয় জয়। এই দাপুটে জয় তাদের সিরিজ জয়ের আশা জিইয়ে রাখল। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন হারিস রউফ, তার অসাধারণ বোলিংয়ে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে ১৬৩ রানে থামিয়ে দিয়েছিল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর বিবরণ:
অস্ট্রেলিয়া: ৩৫ ওভারে ১৬৩ (স্মিথ ৩৫, শর্ট ১৯, জাম্পা ১৮, ইংলিস ১৮; রউফ ৫/২৯, আফ্রিদি ৩/২৬)
পাকিস্তান: ২৬.৩ ওভারে ১৬৯/১ (সাইম ৮২, শফিক ৬৪*, বাবর ১৫*; জাম্পা ১/৪৪)
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হারিস রউফ।