গাজার বেইত লাহিয়া শহরে শনিবার রাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৮৭ জন নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন। এ হামলায় ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এটি গত কয়েক মাসের মধ্যে একটি বড় ক্ষতির ঘটনা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা হামলার ঘটনা তদন্ত করছে এবং দাবি করেছে, হামাসের পক্ষ থেকে যে মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছে তা বাস্তবতার চেয়ে বেশি। তারা জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের একটি স্থাপনা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে উদ্ধারকাজে অনেক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকারী দলগুলো কাজ করতে পারছে না। তারা বলেছেন “অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপে এবং রাস্তায় আটকে রয়েছে এবং অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পরিষেবা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।”
এই হামলা একটি বড় সামরিক অভিযানের অংশ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জাবালিয়া অঞ্চলে হামাসের যোদ্ধাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। এ সহিংসতা দেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়েছে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে হামলার নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন “নিরীহ জীবন রক্ষা করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।”
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ দিকে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়ার ফলে অনেক ফিলিস্তিনির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, এটি একটি কৌশল হতে পারে যাতে তারা উত্তর গাজা থেকে সরিয়ে দিয়ে যুদ্ধের পরে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা যায়। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তারা ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান।
জাবালিয়ায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, তারা অনেক সশস্ত্র ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং তাদের অস্ত্র ও সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। কিন্তু স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ইসরায়েলি বাহিনী আশ্রয়স্থলে হামলা চালিয়ে অনেক পরিবারকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং অনেক পুরুষকে আটক করেছে।
গত সপ্তাহে হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার নিহত হওয়ার পর শান্তির আলোচনা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। গত বছর অক্টোবর ৭ তারিখে হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছিল এবং ২৫১ জন অপহৃত হয়েছিল। কিন্তু এই নতুন হামলা আবার সংঘাতের তীব্রতা দেখাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযান চলাকালীন ৪২ হাজার ৬০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। গাজার ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন জনসংখ্যার অধিকাংশ স্থানচ্যুত হয়েছে এবং খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহের সংকট দেখা দিয়েছে।
কামাল আদওয়ান ইন্দোনেশীয় এবং আল-আওদা হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের হাসপাতালগুলো ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে। কামাল আদওয়ান হাসপাতাল সরাসরি গুলিবর্ষণের মুখে পড়েছে।
এখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে উঠেছে এবং নিরীহ মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র- রয়টার্স