গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাসের একটি সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন দখলদার ইসরাইলের ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল ইহসান দাকসা। গতকাল এই হামলার ঘটনায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একজন উঁচু পর্যায়ের কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে, যা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হামলা প্রসঙ্গে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, কর্নেল দাকসা গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি ট্যাংক পরিচালনা করছিলেন। সেখানে হামাসের যোদ্ধারা তার ট্যাংকসহ মোট দুটি ট্যাংকে বিস্ফোরক দিয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় কর্নেল দাকসা ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান এবং আরও একজন সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত হন।
টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজার মাটিতে এ ধরনের স্থল হামলার সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর যে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের মধ্যে কর্নেল দাকসা অন্যতম। এটি প্রতিফলিত করে যে, গাজায় যুদ্ধের পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এবং হামাসের সামরিক শক্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কর্নেল ইহসান দাকসা ৪১ বছর বয়সী ছিলেন এবং দ্রুজ শহর দলিয়াত আল-কার্মেলের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি গত জুনে ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের কমান্ডারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সামরিক ক্যারিয়ারে ২০০৬ সালের আয়তা আস-সাব যুদ্ধে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল যার জন্য তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছিলেন।
হামাস ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ গত বছরের ৭ অক্টোবর শুরু হয়। এই এক বছরের অধিক সময়ে চলমান সংঘর্ষে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা চূড়ান্তভাবে ৪২ হাজারেরও বেশি পৌঁছেছে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা ইসরাইলের সামরিক নেতৃত্বের ওপর হামাসের সক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধির প্রমাণ দেয়। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, তারা হামাসের শক্তি দমন করতে বিভিন্ন সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হামাসের সাম্প্রতিক এ হামলা প্রমাণ করে যে, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও অত্যন্ত দৃঢ়।
গাজার পরিস্থিতি এবং এই সংঘাতের পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মতামত তুলে ধরছেন। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, এই হামলার ফলে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন আসতে পারে এবং তারা আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে পারে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখনো এ সংকটের প্রতি রয়েছে এবং তারা সংকট সমাধানে নতুন উদ্যোগ নিতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে গাজার সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে উঠেছে। খাদ্য, চিকিৎসা ও মৌলিক সেবার অভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যুদ্ধ ও হামলার ফলে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিরা মানবিক সংকটে পড়েছে, যা সমাধানের জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজন।
এখন দেখার বিষয়, ইসরাইল এই পরিস্থিতির মোকাবিলা কিভাবে করে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের প্রতিকারের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়। গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সংঘাতের উপর নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববাসীকে অবগত রাখার চেষ্টা করছে।