ইসরাইল-সংঘাত এক দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল সমস্যা, যা প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলছে। এই সংঘাতের পেছনে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াই। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং ইসরাইলের যুদ্ধবিগ্রহের ফলে আরব দেশগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে আসছে।
ইসরাইলের চলমান আগ্রাসন এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন সত্ত্বেও, অধিকাংশ আরব দেশই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থান পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক বাস্তবতা। ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক উন্নয়ন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা কৌশল, আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মতো বিষয়গুলো আরব দেশগুলোর ইসরাইলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণে বাঁধা সৃষ্টি করছে।
ফলস্বরূপ আরব দেশগুলো, যারা ফিলিস্তিনের পক্ষের অন্যতম প্রধান সমর্থক, তাদের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণে নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছে। এই প্রতিবেদনটি এসব কারণগুলো বিশ্লেষণ করবে এবং কেন আরব দেশগুলো ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে তা তুলে ধরবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভাজন-
আরব বিশ্বে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ বিভাজন ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আরব দেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতার সংগ্রাম, রাজনৈতিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলছে। যা তাদের বাহ্যিক নীতি নির্ধারণকে দুর্বল করেছে।
আরব দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা-
বর্তমানে বেশিরভাগ আরব দেশই বিভিন্ন ধরনের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার শিকার। মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, আলজিরিয়া এবং সুদানে চলমান যুদ্ধ, সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এসব দেশের সরকারগুলো নিজেদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে আরব দেশগুলোর সরকারের দৃষ্টি আন্তর্জাতিক সংকটের দিকে কম পরছে, যার মধ্যে ফিলিস্তিনের অধিকার সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উদাহরণস্বরূপ ২০১১ সালের ‘আরব বসন্ত’ আন্দোলন থেকে শুরু করে, অনেক দেশই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এবং বিদ্রোহের মধ্যে পড়েছে। সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে এবং সরকার গুলোর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের প্রথম অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং শাসন। ফলে এই দেশগুলো আন্তর্জাতিক বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তি বা ইচ্ছা রাখছে না।
আরব লীগে বিভাজন-
আরব দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব একে অপরকে সমর্থন দিতে এবং সঙ্কটের সময় একত্রে দাঁড়াতে বাধা সৃষ্টি করছে।
বিশেষ করে, আরব লীগের অভ্যন্তরে রয়েছে তীব্র বিভাজন। কিছু আরব দেশ যেমন সৌদি আরব, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানকে শত্রু হিসেবে দেখে। তাদের শত্রুতার কারণে এই দেশগুলো একে অপরকে সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
অন্যদিকে, কিছু দেশ যেমন কাতার এবং তুরস্ক ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছে, যা আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে। এই বিভাজন ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবার ক্ষেত্রে একতা এবং সমন্বয় সাধনকে কঠিন করে তুলছে।
রাষ্ট্রীয় স্বার্থের দ্বন্দ্ব-
আরব দেশগুলোর মধ্যে আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে নিজেদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রতি তাদের অগ্রাধিকার। কিছু আরব দেশ, বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়েছে। এই সম্পর্ক মূলত ইরানের প্রভাব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটি কৌশল হিসেবে দেখা হয়।
সৌদি আরব এবং অন্যান্য অনেক দেশ ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাতে চাইলেও, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন তাদের জন্য অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে, ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে তারা দ্বিধাগ্রস্ত।
ফিলিস্তিনি ফ্রন্টের অভ্যন্তরীণ বিভাজন-
ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজনও আরব দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ফিলিস্তিনের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল-ফাতাহ এবং হামাস-অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে লিপ্ত।
ফাতাহ পশ্চিম তীরে এবং হামাস গাজায় আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং এই বিভাজন আরব বিশ্বের কাছে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ফলে, আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে এককভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে শক্তিশালী এবং কার্যকর সমর্থন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
একদিকে, ফাতাহর সমর্থক দেশগুলো এবং অন্যদিকে হামাসের সমর্থক দেশগুলো নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আলাদা আলাদা কৌশল গ্রহণ করছে। এর ফলে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোতে ঐক্যবদ্ধ কৌশল গঠন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক চাপ ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা-
আরব দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং বিভাজন শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব সমস্যা নয় বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও চাপের ফলে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আরব দেশগুলো বহু ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক পরাশক্তি, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর চাপের সম্মুখীন হচ্ছে।
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরাইলের প্রতি সমর্থন এবং তার নিরাপত্তার জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আরব দেশগুলোর মধ্যে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এর ফলে, একদিকে ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষা করার জন্য আরব দেশগুলো চাপ প্রয়োগ করতে চাইলেও, অন্যদিকে তাদের বিদেশি সম্পর্কের ওপরও অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হয়।
এই সব কারণে, আরব দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং একে অপরের মধ্যে বিভাজন তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন-
সম্প্রতি আরব বিশ্বের কিছু দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে, যা ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের ঐতিহ্যগত সমর্থন এবং প্রতিবাদী মনোভাবের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়েছে।
২০২০ সালে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ নামে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে শুরু করে কয়েকটি আরব দেশ। যার ফলে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক চিত্রের পরিবর্তন ঘটে। এতে আরব দেশগুলোর ইসরাইলের প্রতি অবস্থান এবং ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের নীতি কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তা বুঝতে সহায়ক হয়।
আব্রাহাম অ্যাকর্ডস ও সম্পর্কের উন্নয়ন-
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর সুদান এবং মরক্কোও এই পথে হাটে। ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ নামে পরিচিত এই চুক্তি মূলত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্ররোচনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি উদ্যোগ ছিল। এতে প্রধানত নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক কৌশলগত স্বার্থের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের সংকট অনেক সময়ই এর মাঝখানে চাপিয়ে রাখা হয়।
এই চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করায় এই দেশগুলো ইসরাইলের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা পেতে শুরু করে। যেমন: প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং এয়ারলাইন্সের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ।
কিন্তু, এই সম্পর্কের ফলে আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এক ধরনের দ্বৈত মানদণ্ডের মধ্যে পড়েছে।
নিরাপত্তা কৌশল এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ-
আরব দেশগুলোর জন্য ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি নিরাপত্তার কৌশল হতে পারে। ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রধান নিরাপত্তা শত্রু হিসেবে দেখে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য দেশগুলো। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন একটি অপ্রত্যাশিত কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে মনে করেছে। ইরান বিরোধী এজেন্ডা ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে ইসরাইলের শক্তিশালী সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা তৎপরতা অনেক দেশের জন্য এক ধরনের গোপন সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা একটি সামরিক ও কৌশলগত স্বার্থে পরিণত হয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও ইসরাইলের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা আরব দেশগুলোর জন্য লাভজনক হতে পারে। ইসরাইলের হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি, কৃষি প্রযুক্তি এবং জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরব দেশগুলোর বাণিজ্যিক উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর জন্য এই কৌশলগুলি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পিছনে একটি বড় প্রভাবক।
ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এবং প্রতিবাদের সংকট-
তবে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে আরব দেশগুলোর অবস্থান ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের ঐতিহ্যগত সমর্থনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ২০২০ সালের পরে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করায় অনেক আরব জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ দেখা গেছে। বিশেষ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরব জনগণের দীর্ঘকালীন ক্ষোভ এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি ক্রমেই বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে, এই চুক্তিগুলোর ফলে ফিলিস্তিনের প্রতি আরব দেশের কর্তৃত্ব এবং সমর্থন নিঃশব্দভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে একা হয়ে পড়ছে। কারণ আরব দেশগুলোর মধ্যে কিছু সরকার নিজেদের জাতীয় স্বার্থের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করছে। ফলে ফিলিস্তিনের সংকটকে এক ধরনের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পণ্য হিসেবে দেখছে।
আরব দেশগুলোর ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে চমক সৃষ্টি করেছে কিন্তু এটি তাদের নিজস্ব জনগণের মধ্যে বিরোধ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। অনেক আরব দেশ মনে করে যে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা শান্তির পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।
তবে ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান ছাড়া এটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনতে পারে না। এই দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান বিশ্ব রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি আরব দেশগুলোর শপথ অটুট রাখতে তাদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন: ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রও এই সম্পর্কের দিকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা আশা করছে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আরব দেশগুলো শান্তি প্রক্রিয়ায় ইসরাইলকে আরো বেশি সহযোগিতার দিকে নিয়ে যাবে। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ইস্যু এবং সঠিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পর্কগুলো কেবল সান্ত্বনামূলক এবং অস্থায়ী হতে পারে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন আরব দেশগুলোর ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক পথচলার উপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। যদি ফিলিস্তিনের জন্য কোনো কার্যকর সমাধান দেখা না যায়, তাহলে এই সম্পর্কগুলো আরও অস্থির হতে পারে। কারণ জনগণের মধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতির মনোভাব অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে, যদি আরব দেশগুলো তাদের দেশের জনগণের চাপের মুখে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয় তবে এই সম্পর্কের উন্নয়ন পুনরায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং গ্লোবাল পলিটিক্স-
ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ফিলিস্তিনের সংকটের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বৈশ্বিক চাপ। মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক পরাশক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি যে ভূমিকা পালন করে আসছে। তা আরব দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক চাপ এবং কূটনৈতিক কৌশল, যা কিছু আরব দেশের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে, তা তাদের ফিলিস্তিনের প্রতি অবস্থান এবং ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের দিকটি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাব-
ইউরোপীয় ইউনিয়নও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউরোপীয় দেশগুলি বরাবরই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যেও ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে কিছু মতবিরোধ রয়েছে। কিছু দেশ যেমন: ফ্রান্স এবং জার্মানি তারা ইসরাইলের সাথে মিত্রতা বজায় রাখতে আগ্রহী। তবে অন্যদিকে স্পেন, গ্রিস এবং অন্যান্য কিছু দেশ ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফিলিস্তিনিদের জন্য দুই রাষ্ট্র নীতির সমর্থক। তবুও তারা কার্যকরভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে অক্ষম। এর কারণ হলো, ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপও কিছুটা অদৃশ্য হয়ে যায় কারণ ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতায় তারা লাভবান হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ- আরব দেশগুলোর উপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ছে কিন্তু তারা তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আইন-
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক আইনেও ফিলিস্তিনের অধিকারের বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং সমর্থন রয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদ বারবার ইসরাইলের আক্রমণাত্মক আচরণ ও ভূমি দখলকে নিন্দা করেছে। ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু জাতিসংঘের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অসাধ্য হয়ে পড়েছে, কারণ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে একটি মৌলিক বিভাজন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায়ই ইসরাইলের প্রতি ভেটো প্রদান করে, যার ফলে কার্যকর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় না।
এছাড়া আন্তর্জাতিক আদালত এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলিও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকে চ্যালেঞ্জ করেছে। তবে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক আদালত থেকে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনও অগ্রগতি হয়নি। আরব দেশগুলোও আন্তর্জাতিক সাপোর্টের পাশাপাশি তাদের নিজেদের নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে না। কারণ আন্তর্জাতিক চাপ ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতা তাদের অবস্থানকে দুর্বল করছে।
আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থান-
আন্তর্জাতিক চাপের পাশাপাশি আরব দেশগুলোর নিজেদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানও ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন: কয়েকটি আরব দেশ যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশর। যাদের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, তারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী। সৌদি আরব যদিও ফিলিস্তিনের অধিকারের প্রতি ঐতিহ্যগতভাবে সহানুভূতিশীল কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, ইরান বিরোধী নিরাপত্তা কৌশল এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে তারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং জনমত-
ফিলিস্তিনের সংকট আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্ব পায়। তবে এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং, কারণ পশ্চিমা মিডিয়া অনেক সময় ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে কথা বলে এবং ফিলিস্তিনিদের বেদনাকে কম গুরুত্ব দেয়। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ার বিস্তারও অনেক ক্ষেত্রে একটি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে। বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির পর কিছু আরব দেশ নিজেদের জনগণের চাপের মুখে এসেছে। কিন্তু বৈশ্বিক রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
অর্থনৈতিক স্বার্থ-
আরব দেশগুলোর মধ্যে বেশ কিছু রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। যা তাদের ফিলিস্তিনের পক্ষে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ইসরাইলের উচ্চ প্রযুক্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কৃষি উন্নয়ন এবং জলের ব্যবস্থাপনার মতো খাতে অগ্রগতি আরব দেশগুলোর জন্য লাভজনক।
বিশেষ করে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো ইরানের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা কৌশল হিসেবে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। ফলে, এই দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নয়। কারণ তাদের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রাধান্য পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা-
ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত দীর্ঘকাল ধরে চললেও, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা কখনোই থেমে থাকেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি এবং কূটনীতিকরা দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বহুবার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আরব দেশগুলোর জন্য ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এটি একটি বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মধ্যস্থতার কৌশলগুলি তাদের আচরণ এবং সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব-
যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান শক্তি হিসেবে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক এবং সামরিক মিত্র। ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ সমর্থন অনেক সময় আরব দেশগুলোর স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অধীনে, ইসরাইলের প্রতি কঠোর সমর্থন এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি ন্যায্যতার প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছে। তার “শতাব্দী চুক্তি” (Deal of the Century) ইসরাইলের অধিকৃত পশ্চিম তীরের একাংশকে ইসরাইলের স্থায়ী অংশ হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা আরব দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিরোধিতার সৃষ্টি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নীতির কারণে আরব দেশগুলো যখন ফিলিস্তিনের পক্ষ নেয়ার চেষ্টা করে, তখন তাদের কূটনৈতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও নিরাপত্তা সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা থাকে। ফলে আরব দেশগুলো অধিকাংশ সময় তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের খারাপ হতে ভীত থাকে।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা-
জাতিসংঘ (UN) এবং তার বিভিন্ন সংস্থা যেমন ইউনেসকো, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ও প্রজ্ঞাপন গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও বহুবার ইসরাইলের স্থায়ী বসতি স্থাপনের এবং পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা উপস্থিতির বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে বিভাজন এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো পাওয়ার ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবং মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রস্তাবনা ফিলিস্তিনের পক্ষের সমর্থন দিলেও, তাদের বাস্তবায়ন হতে পারে না। কারণ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কারণে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। আরব দেশগুলোর জন্য এ ধরনের আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে প্রভাবিত হয়ে, তাদের ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ নিতে অনেক সময় সংকোচ থাকে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা-
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দুই রাষ্ট্র নীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। EU সবসময়ই ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে কথা বলেছে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের কারণে এটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ কিংবা শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে একজোট হতে পারেনি।
বিশেষ করে, কিছু EU সদস্য রাষ্ট্র যেমন ফ্রান্স এবং জার্মানি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। আর অন্যান্য দেশ যেমন স্পেন এবং গ্রিস ফিলিস্তিনের প্রতি অধিক সহানুভূতিশীল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে আরব দেশগুলোকে EU দ্বারা উপযুক্ত কূটনৈতিক সমর্থন মেলেনি।
মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ও মিসরের ভূমিকা-
মিসর একটি ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী আরব দেশ, যা ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করতে বহুবার চেষ্টা করেছে। মিশরের প্রস্তাবিত মধ্যস্থতা ও শান্তি চুক্তি অনেক সময় ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যকর হলেও, অধিকাংশ সময় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় তারা সফল হতে পারেনি। মিশরের ভূমিকা ছিল মূলত: ফিলিস্তিনিদের কাছে একটি নিরপেক্ষ মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। তবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপ এবং ইসরাইলের সঙ্গে মিশরের নিজস্ব সম্পর্কের কারণে তার অবস্থান সীমাবদ্ধ।
আঞ্চলিক শক্তি ও তুরস্কের ভূমিকা-
তুরস্কও ফিলিস্তিনের সমর্থনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এরদোয়ান সরকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়। তবে তুরস্কের ভূমিকা আরব দেশগুলোর মধ্যে একীভূত সমর্থন তৈরি করতে পারছে না। কারণ তুরস্কের পশ্চিমা শক্তির প্রতি সম্পর্ক এবং কূটনৈতিক অগ্রাধিকারের কারণে তাদের প্রভাব সীমিত রয়েছে। তুরস্কের প্রতিবাদী কূটনীতি ফিলিস্তিনের সমর্থনে আরব দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
ইসরাইল-আরব সম্পর্কের উন্নয়ন: আব্রাহাম চুক্তি
২০২০ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহায়তায় সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) এবং বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য “আব্রাহাম অ্যাকর্ডস” চুক্তি সই করে। এটি ছিল আরব দেশগুলোর মধ্যে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার একটি নজিরবিহীন উদ্যোগ। এই চুক্তি ফিলিস্তিনিদের জন্য হতাশাজনক হলেও এটি আরব দেশগুলোর কূটনৈতিক অবস্থানকে পরিবর্তন করেছে। এই চুক্তি আরব দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বাধাকে আরও শক্তিশালী করেছে। কারণ তারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুবিধা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেয়।
আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের সমাধানে কিছু ভূমিকা রেখেছে তবে আরব দেশগুলোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে এগুলোর প্রভাব সীমিত। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির রাজনৈতিক স্বার্থ, আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে আরব দেশগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ করেছে।