আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন। সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন চলবে আগামী ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রায় ২০০ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিয়েছেন, যাদের লক্ষ্য জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আরও সহায়তা দেওয়ার কার্যকর উপায় খুঁজে বের করা।
জাতিসংঘের এই বার্ষিক সম্মেলন ‘কপ’ বা ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’ নামে পরিচিত, যার এবারের আসর ‘কপ-২৯’। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু চুক্তির অধীনে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো প্রতিবছর জলবায়ু ইস্যুতে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে আসছে।
অন্যবারের মতো এবারও সম্মেলনের প্রথম দিনেই সাধারণত বিশ্বের বড় দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা যোগ দেন। তবে এবারের সম্মেলনে অনুপস্থিত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এবার আফগানিস্তানের তালেবান সরকারও প্রথমবারের মতো সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে।
এবারের কপ-২৯ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় অর্থসহায়তা। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে বিশ্বনেতারা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার করেছিলেন। এর আওতায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামাল দিতে উদীয়মান দেশগুলোকে অর্থসহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। তবে এতদিনে সে সহায়তা যথেষ্ট পরিমাণে প্রদান করা সম্ভব হয়নি। আর চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলোর মতো বড় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো তহবিলে আর্থিক অবদান রাখছে না।
এবারের সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়ে একটি সম্মিলিত নীতি নেওয়ার প্রয়াস থাকলেও তা কার্যকর হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। জি-২০ সম্মেলনে কিছু দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, যা জলবায়ু উদ্যোগের অগ্রগতি শ্লথ করতে পারে। অন্যদিকে, কলম্বিয়ায় জাতিসংঘের পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আলোচনাও কোনো ঐকমত্য ছাড়াই শেষ হয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি যুক্তরাষ্ট্রকে ঘিরে। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য জয় জলবায়ু সহায়তা তহবিল এবং প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রত্যাহার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। ট্রাম্প পরিবেশবান্ধব জ্বালানিকে প্রতারণা বলে মনে করেন এবং আগেই প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ হলে জলবায়ু সহায়তা তহবিল বড় ধরনের আঘাত পেতে পারে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক জোয়েরি রগেলজ বলেছেন, ‘প্রতিবছর পৃথিবী একটু একটু করে উষ্ণ হচ্ছে, তাই এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’ বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকটের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এবারের কপ সম্মেলন থেকে কার্যকর সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব সদস্য দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাই শেষ পর্যন্ত মুখ্য হয়ে উঠবে।