বিশ্বখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা বোয়িং আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে তাদের কর্মীশক্তি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে সোসাইটি অব প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং এমপ্লয়িজ ইন অ্যারোস্পেস (এসপিইইএ)-এর ৪৩৮ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করেছে।
বোয়িংয়ের সিইও কেলি অর্টবার্গ কর্মীদের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের আর্থিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোম্পানির প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে কর্মী স্তর পুনর্বিন্যাস করা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
কোম্পানিটি ইতোমধ্যেই উৎপাদন সংকট, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) সীমাবদ্ধতা এবং সাম্প্রতিক শ্রমিক ধর্মঘটের চাপ মোকাবিলা করছে। বিশেষত, ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজের উৎপাদন প্রতি মাসে মাত্র ৩৮টি বিমানে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, যা বোয়িং এখনও পূরণ করতে পারেনি।
এসপিইইএ ইউনিয়নের মোট ৪৩৮ জন কর্মী ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়েছেন। এদের মধ্যে ২১৮ জন পেশাদার ইউনিটের সদস্য, যাদের মধ্যে প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীরা অন্তর্ভুক্ত। বাকি কর্মীরা কারিগরি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত, যারা পরিকল্পনাবিদ, বিশ্লেষক, প্রযুক্তিবিদ এবং দক্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করতেন।
গত সপ্তাহে ছাঁটাইয়ের নোটিশ (গোলাপি স্লিপ) পাঠানো হয়। ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের বেশিরভাগই ওয়াশিংটন রাজ্যে অবস্থান করছেন তবে কিছু কর্মী ওরেগন, ক্যালিফোর্নিয়া এবং উটাহতেও কর্মরত ছিলেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত তারা বেতনভুক্ত থাকবেন।
বোয়িং ছাঁটাইকৃত কর্মীদের জন্য কিছু সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
– ক্যারিয়ার ট্রানজিশন সেবা।
– তিন মাস পর্যন্ত ভর্তুকিসহ স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা।
– প্রতি বছরের পরিষেবার জন্য এক সপ্তাহের বেতনের সমপরিমাণ সেভারেন্স প্যাকেজ।
অক্টোবরেই বোয়িং ঘোষণা করেছিল যে তারা তাদের কর্মীশক্তির ১০ শতাংশ কমিয়ে আনতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রায় ১৭ হাজার কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক ধর্মঘট বোয়িংয়ের আর্থিক অবস্থার ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করেছে।
বোয়িং বর্তমানে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে তাদের প্রধান কার্যালয় থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর্থিক ও উৎপাদন সমস্যার সমাধান করা এখন কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ছাঁটাই শুধু বোয়িংয়ের কর্মী ও তাদের পরিবারের জন্যই নয়, বৈশ্বিক উড়োজাহাজ শিল্পের জন্যও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ৭৩৭ ম্যাক্সের উৎপাদন সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি আর্থিক সংকট কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমকে কঠিন করে তুলছে।
বোয়িংয়ের এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এভিয়েশন খাতের সামগ্রিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।