ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অস্থিরতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘোষণা। বিরোধী নেতা এদমুন্দো গোনসালেস উররুতিয়াকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে দেশটি। মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই স্বীকৃতি ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক অঙ্গনে।
গত ২৮ জুলাই ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক চলছে। ক্ষমতাসীন নিকোলা মাদুরো তৃতীয়বারের মতো নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে বিরোধী শিবিরের দাবি, ওই নির্বাচন ছিল ব্যাপক কারচুপিপূর্ণ। বিরোধী প্রার্থী গোনসালেস উররুতিয়ার সমর্থকেরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী বিক্ষোভে নামেন।
নির্বাচনের পর থেকে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। ভোটের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফলাফল প্রকাশে আন্তর্জাতিক আহ্বান সত্ত্বেও মাদুরো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান-
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “২৮ জুলাই ভেনেজুয়েলার জনগণ তাঁদের মতামত প্রকাশ করেছেন এবং নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর অর্থ হলো ভোটারদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি নতুন কিছু নয়। এর আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, গোনসালেস উররুতিয়া প্রকৃত বিজয়ী। তবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এটাই প্রথম। এ ঘোষণার পর গোনসালেস উররুতিয়া নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাদের এই অবস্থান আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।”
মাদুরো সরকারের প্রতিক্রিয়া-
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মাদুরো সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউভান গিল টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে “ভেনেজুয়েলার স্বীকৃত শত্রু” বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে “হাস্যকর” বলেও উল্লেখ করেছে সরকার।
রাজনৈতিক সংকট ও মানবাধিকার লঙ্ঘন-
ভেনেজুয়েলায় বিতর্কিত নির্বাচনের পর শুরু হওয়া বিক্ষোভে দেশব্যাপী সহিংসতার সৃষ্টি হয়। রাজধানী কারাকাসসহ বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২৮ জন নিহত হন, আহত হন ২০০ জনের বেশি। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় ২৪০০ জন বিক্ষোভকারীকে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ২২৪ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী নেতা গোনসালেস উররুতিয়া এবং তার সহযোগী মারিয়া করিনা মাচাডো নজিরবিহীন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখে দেশত্যাগে বাধ্য হন। গোনসালেস বর্তমানে স্পেনে অবস্থান করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া-
ভেনেজুয়েলার নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মাদুরো সরকারের কাছে নির্বাচনের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফল প্রকাশের দাবি জানায়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বেশ কিছু দেশ গোনসালেস উররুতিয়াকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার এই রাজনৈতিক সংকট দেশটির ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাস্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি বিরোধী শিবিরের মনোবল বাড়ালেও এটি রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীর করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলায় মাদুরো সরকারের কৌশলের ওপর। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।