নতুন মার্কিন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কার্যকর হওয়া নীতিমালার প্রভাব পড়ছে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যটনে। কঠোর অভিবাসন ব্যবস্থা, সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁট, বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি ও বিমান পরিবহন নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।
নতুন নীতির প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ভিসা পেতে এখন আগের তুলনায় বেশি সময় লাগছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও দীর্ঘতর যাচাই প্রক্রিয়ার ফলে অপেক্ষার সময় বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কলম্বিয়ার মতো কিছু দেশে পর্যটক ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় ৭০০ দিন পর্যন্ত গড়িয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপ ও ২০২৮ সালের অলিম্পিক গেমসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের আগে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিবহন খাতও সংকটের মুখে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে একাধিক প্লেন দুর্ঘটনা ও ফেডারেল এভিয়েশন প্রশাসন (এফএএ)-এর ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে ফ্লাইট নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন টিএসএ ও কোস্ট গার্ডের প্রধান কর্মকর্তাদের অপসারণ করায় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ও পরিচালনা ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে। ফলে যাত্রীদের জন্য দীর্ঘতর নিরাপত্তা পরীক্ষা ও ফ্লাইট বিলম্বের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নন-বাইনারি ‘এক্স’ লিঙ্গ চিহ্নিত পাসপোর্টের প্রক্রিয়া স্থগিত করায় কিছু ভ্রমণকারীর জন্য জটিলতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, টেক্সাসের মতো কিছু রাজ্যে সরকারি ভবন ও বিমানবন্দরে জন্মলগ্নে নির্ধারিত লিঙ্গ অনুযায়ী শৌচাগার ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, যা ট্রান্সজেন্ডার ভ্রমণকারীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে সড়কপথে ভ্রমণও ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। কানাডিয়ান তেলের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ হলে গ্যাসের মূল্য প্রতি গ্যালনে ০.১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
এছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চার্জিং স্টেশন সম্প্রসারণ প্রকল্প স্থগিত করায় বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এদিকে ট্রেন পরিষেবা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সরকারি অনুদান কমার ফলে আমট্রাকসহ অন্যান্য রেল পরিষেবাগুলো সীমিত হতে পারে, যা টিকিটের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু রুটের পরিষেবা বন্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন ও আতিথেয়তা খাত নতুন অভিবাসন নীতির কারণে চাপে পড়তে পারে। এই খাত অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল, তবে কর্মসংস্থান ভিসায় কড়াকড়ি আরোপের ফলে হোটেল ও রেস্তোরাঁ খাতে কর্মী সংকট দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ও মিয়ামির মতো প্রধান পর্যটনকেন্দ্রে পরিষেবার মান হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় উদ্যানগুলো কর্মী সংকটের মুখে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক ইতোমধ্যে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পগ্রাউন্ড বুকিং স্থগিত করেছে এবং অন্যান্য পার্কেও পরিষেবা সীমিত করা হতে পারে। ফলে পর্যটকদের আগেভাগে পরিকল্পনা করেই সফর নিশ্চিত করতে হবে।
এই পরিবর্তনগুলোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ আগের চেয়ে বেশি পরিকল্পনাসাপেক্ষ ও জটিল হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক নীতিগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পর্যটন খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।