রাশিয়ার অভিজাত ড্রোন ইউনিট ‘রুবিকন সেন্টার অফ অ্যাডভান্সড আনম্যানড সিস্টেমস’ ২৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রিত সুদঝা শহরের গ্যারিসনের প্রধান সরবরাহ লাইন।
বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু পারপেচুয়া এই হামলাকে ‘উন্নত ড্রোন কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করেন। একাধিক বিস্ফোরক ড্রোনের সমন্বয়ে পরিচালিত এই আক্রমণে ইউক্রেনের শত শত সামরিক যান ধ্বংস হয়।
হামলার প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ইউক্রেনীয় বাহিনীর অন্তত ১০ হাজার সেনা কুর্স্ক থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। সরবরাহ সংকট ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় তারা দ্রুত সরে যায়, তবে ভারী অস্ত্র ও সামরিক যান সঙ্গে নিতে পারেনি। এই অস্ত্রশস্ত্র পরবর্তীতে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে।
এম-১ আব্রামস ট্যাঙ্ক-
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩১টি এম-১ আব্রামস ট্যাঙ্ক সরবরাহ করে। ১২০ মিলিমিটার কামানসহ ৬৯ টন ওজনের এই ট্যাঙ্ক চার সদস্যের ক্রু নিয়ে পরিচালিত হয়। ইউক্রেনের ৪৭ মেকানাইজড ব্রিগেডের জন্য এসব ট্যাঙ্ক বরাদ্দ ছিল।
দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে ব্রিগেডের ট্যাঙ্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কুর্স্ক থেকে পিছু হটার সময় আরও একটি এম-১ আব্রামস রুশ বাহিনীর হাতে পড়ে। এ নিয়ে ইউক্রেন বাহিনী ১০ থেকে ১৯টি এম-১ ট্যাঙ্ক হারিয়েছে। তবে শিগগিরই অস্ট্রেলিয়া থেকে ৪৯টি নতুন এম-১ ট্যাঙ্ক পাওয়ার কথা রয়েছে।
এম-২ ব্র্যাডলি যুদ্ধযান-
প্রায় ৩৩ টন ওজনের এম-২ ব্র্যাডলি যুদ্ধযান ইউক্রেনের অন্যতম কার্যকর সাঁজোয়া যান। এটি ২৫ মিলিমিটার অটোক্যানন এবং উন্নত সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩০০টির বেশি ব্র্যাডলি সরবরাহ করেছিল, যা ছয়টি ব্যাটালিয়নে বিভক্ত ছিল। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে ৮০টির বেশি ব্র্যাডলি ধ্বংস হয়েছে। কুর্স্কে রুশ বাহিনীর দখলে যাওয়া ব্র্যাডলিটি সম্ভবত ৮১তম।
ইউক্রেনের জন্য দুঃসংবাদ হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে ব্র্যাডলি সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ২৮ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেন এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কৃতজ্ঞতার অভাব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এম-৭৭৭ হাউইটজার-
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের তৈরি এম-৭৭৭ হাউইটজার কামান ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে আসে। এটি সোভিয়েত আমলের ১৫২ মিলিমিটার কামানের চেয়ে উন্নত এবং দীর্ঘ পাল্লার গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম।
ইউক্রেনীয় বাহিনী এ পর্যন্ত প্রায় ২০০টি এম-৭৭৭ কামান ব্যবহার করেছে। তবে রুশ বাহিনীর পাল্টা হামলায় কুর্স্কে অন্তত ৫৫টি হাউইটজার হারিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রুশ বাহিনীর হাতে পড়া কামানটি প্রথম অক্ষত এম-৭৭৭।
সামগ্রিক ক্ষতি-
কুর্স্কে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রায় ৫০০টি সামরিক যান ও ভারী অস্ত্র হারিয়েছে, অন্যদিকে রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ৬০০। যদিও ইউক্রেন এটিকে প্রতিরোধমূলক জয় হিসেবে দেখছে, বাস্তবতা হলো রাশিয়ার তুলনায় ইউক্রেনের সামরিক সরঞ্জামের মজুত সীমিত। তিন-একের ক্ষতির অনুপাত ধরে রাখার চেষ্টায়ও কুর্স্কে ব্যর্থ হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী, ফলে তাদের পিছু হটতে হয়েছে।