বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মসজিদগুলো শুধু ধর্মীয় স্থান নয়, বরং তা ইসলামের মহান স্থাপত্যশিল্পের প্রতিফলন। হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আল্লাহর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও পূজার প্রতীক হয়ে উঠেছে এসব মসজিদ। আজ আমরা জানবো বিশ্বের ২০টি সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ সম্পর্কে, যেগুলোর আর্কিটেকচার, ঐতিহ্য এবং অপরূপ সৌন্দর্য দর্শকদের মুগ্ধ করে।
১. আল-আজহার মসজিদ, কায়রো (মিশর)
৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত, এটি বিশ্বের অন্যতম পুরনো ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ। মসজিদটির আর্কিটেকচার আলোকিত হয়ে আছে তুর্কি প্রবেশদ্বার দিয়ে, যা এক অসামান্য স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ।
২. হাসান-II মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা (মরক্কো)
১৯৮৬ সালে নির্মিত, এই মসজিদটি ৯ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এর মার্বেল, প্লাস্টার, কাঠ এবং ঝিল্লি তৈরি করেছে মরক্কোর দক্ষ কারিগররা। মসজিদটি সমুদ্রের পাশ দিয়ে নির্মিত।
৩.গ্রেট মসজিদ, ডজেন (মালি)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাটি দিয়ে তৈরি মসজিদ, যা ১৯০৭ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এর গম্বুজ এবং নির্মাণশৈলী এক বিশেষ ধরনের, যা ইসলামিক স্থাপত্যের সাথে সুদানী-সাহেলিয়ান প্রভাবও বহন করে।
৪. শাহ ফয়সাল মসজিদ, ইসলামাবাদ (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় মসজিদ, শাহ ফয়সাল মসজিদ ১৯৭৬ সালে তুর্কি স্থপতি ভেদাত দালোকায় দ্বারা নির্মিত। এটি ওটোমান শৈলীতে ডিজাইন করা হলেও এর মিনার ৮০ মিটার উচ্চতায় নির্মিত।
৫. নীল মসজিদ, ইস্তাম্বুল (তুরস্ক)
১৬১৬ সালে নির্মিত, নীল মসজিদ ইস্তাম্বুলের অন্যতম ঐতিহাসিক মসজিদ। এর অভ্যন্তরীণ নীল সিরামিক পুরো বিশ্বে পরিচিত, এবং এটি ছয়টি বিশাল মিনারে সজ্জিত।
৬. উবুদিয়া মসজিদ, কুয়ালা কাংসার (মালয়েশিয়া)
২০ শতকের শুরুতে নির্মিত, উবুদিয়া মসজিদটি তার সোনালী গম্বুজের জন্য পরিচিত। মসজিদটির মার্বেল এবং সোনালী সজ্জা মসজিদকে অনন্য সৌন্দর্য প্রদান করেছে।
৭. বাদশাহী মসজিদ, লাহোর (পাকিস্তান)
১৬৭১ সালে নির্মিত, বাদশাহী মসজিদটি মুঘল স্থাপত্যের একটি বিস্ময়কর উদাহরণ। মসজিদটির আঙিনা প্রায় ১,০০,০০০ মুসল্লি ধারণ করতে সক্ষম।
৮. ভং মসজিদ, পাকিস্তান
১৯৩০-এর দশকে স্থানীয় এক নেতা দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি পাকিস্তানের অন্যতম সুসজ্জিত মসজিদ।
৯. ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ, ব্রুনেই
১৯৫০-এর দশকে নির্মিত, এই মসজিদটির সোনালী গম্বুজ ব্রুনেইর অন্যতম বিখ্যাত স্থাপনা।
১০. সেন্ট সোফিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল (তুরস্ক)
মূলত একটি গির্জা, সেন্ট সোফিয়া মসজিদটি ৫৬০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় এবং ১৪৫৩ সালে মসজিদে রূপান্তরিত হয়।
১১.শেখ জায়েদ মসজিদ, আবু ধাবি (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
২০০৭ সালে নির্মিত এই মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যান্ডমেড কার্পেটের অধিকারী। এর গম্বুজ এবং আর্চগুলো ঐতিহ্যগত ইসলামিক স্টাইলে নির্মিত হলেও আধুনিক নির্মাণ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
১২. গ্রেট মসজিদ অফ শি’আন (চীন)
৭৩২ সালে নির্মিত, এটি চীনের অন্যতম পুরনো মসজিদ। এর সৌন্দর্য হলো এর চীনা স্থাপত্য শৈলী, যা প্যাগোডা ছাদের মতো এবং আদিকালের বাগানসমূহ দ্বারা ঘেরা।
১৩. আবু এল আব্বাস আল-মুরসি মসজিদ, আলেকজান্দ্রিয়া (মিশর)
৮ম শতাব্দীতে নির্মিত এই মসজিদটি সুফি সন্ন্যাসী আবু এল আব্বাস আল-মুরসির সমাধির উপরে প্রতিষ্ঠিত।
১৪. জামি-উল-আলফার মসজিদ, কলম্বো (শ্রীলঙ্কা)
শুরুতে ২০ শতকের প্রথম দিকের এই মসজিদটি তার লাল এবং সাদা স্ট্রাইপের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
১৫. আল-হারাম মসজিদ, মক্কা (সৌদি আরব)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ এবং ইসলামের প্রথম পবিত্র স্থান, এই মসজিদটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৬. কোলশারিফ মসজিদ, কাজান (রাশিয়া)
এটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে পরিচিত, যা ১৬শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল এবং আধুনিক সংস্করণ ১৯৯৬ সালে নির্মিত।
১৭. সুলেমান মসজিদ, ইস্তাম্বুল (তুরস্ক)
১৬শ শতাব্দীতে নির্মিত, সুলেমান মসজিদটি তুরস্কের অন্যতম বিখ্যাত স্থাপনা এবং এটি একটি ছোট শহরের মতো, যেখানে কোরানিক স্কুল, হাসপাতাল, গণশৌচাগারসহ অনেক কিছু ছিল।
১৮. জামা মসজিদ, দিল্লি (ভারত)
ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ, এটি ১৬শ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের শাসনামলে নির্মিত হয়।
১৯. নাসির-ওল-মোলক মসজিদ, শিরাজ (ইরান)
১৯শ শতাব্দীতে নির্মিত এই মসজিদটি তার অভ্যন্তরীণ অপরূপ সজ্জার জন্য পরিচিত, বিশেষত এর রঙিন কাঁচের জানালা এবং মজবুত মসাইক।
২০. ক্রিস্টাল মসজিদ, কুয়ালা টেরেঙ্গানু (মালয়েশিয়া)
২০০৮ সালে নির্মিত, এই মসজিদটি সম্পূর্ণ গ্লাস, স্টিল এবং ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি, যা এক অনন্য স্থাপত্য কীর্তি। রাতে এটি আলোকিত হয়ে ওঠে, যা এটির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই ২০টি মসজিদ শুধু তাদের ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য নয়, তাদের স্থাপত্য ও ডিজাইনের জন্যও বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। ইসলামিক স্থাপত্যের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য উপস্থাপন করে এসব মসজিদ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যের মধ্যে অন্যতম।