দীর্ঘদিনের রহস্যের অবসান ঘটিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় ধারণ করলেন জীবন্ত কোলোসাল স্কুইড। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে, সাউথ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের কাছে প্রায় ৬০০ মিটার নিচে ধরা পড়ে এই বিরল দৃশ্য। স্মিড্ট ওশান ইনস্টিটিউটের গবেষণা জাহাজ ফ্যালকর (টু) থেকে নিয়ন্ত্রিত সাবমেরিন সাবাস্টিয়ান এর ক্যামেরায় ধরা পড়ে এ মহাবিস্ময়।
ধরা পড়া স্কুইডটি এখনো প্রাপ্তবয়স্ক নয়- দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। এটি Mesonychoteuthis hamiltoni প্রজাতির, যা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ৭ মিটার দীর্ঘ ও প্রায় ৫০০ কেজি ওজনের হতে পারে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী অমেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। সূত্র: সিএনএন

কোলোসাল স্কুইড এতদিন শুধু মৃত বা আহত অবস্থায় ধরা পড়েছে বিভিন্ন সমুদ্র প্রাণীর পাকস্থলিতে। জীবন্ত অবস্থায় এদের দেখা যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। এবার ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, স্কুইডটির স্বচ্ছ শরীর ধীরে ধীরে রঙ পরিবর্তন করে লালচে-বাদামি হয়ে উঠছে। এর দেহে থাকা বড় বড় ক্রোমাটোফোর বা রঙ পরিবর্তনের কোষগুলো এর রহস্যময় রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে। এতদিন যা শুধু অনুমানের পর্যায়ে ছিল, এবার তা দৃশ্যমান প্রমাণ পেয়েছে বিজ্ঞানসমাজ।
গবেষকরা মনে করছেন, এই রঙ পরিবর্তনের ক্ষমতাই হয়তো এদের এতদিন মানুষের নজর এড়াতে সাহায্য করেছে।
এ অভিযানের সময় আরও এক বিস্ময় ধরা পড়ে জানুয়ারিতে। অ্যান্টার্কটিকার বেলিংসহাউসেন সাগরে দেখা মেলে জীবন্ত গ্লেসিয়াল গ্লাস স্কুইড-এর। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, স্কুইডটি তার শুঁড় মাথার ওপর তুলে রেখে এক অদ্ভুত ভঙ্গিমায় অবস্থান করছে, যা ‘ককাটু পোজ’ নামে অভিহিত করেছেন তারা।
স্মিড্ট ওশান ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, আগামী চার বছর দক্ষিণ আটলান্টিকের আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের উপকূলে এ ধরনের গবেষণা অভিযান চলবে। এ অভিযানের প্রতিটি মুহূর্ত সরাসরি সম্প্রচারিত হবে ইনস্টিটিউটের ইউটিউব চ্যানেলে। এতে গবেষকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিতে পারবে গভীর সমুদ্রের এই আবিষ্কারের রোমাঞ্চে।
বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় এ ধরনের ঘটনা একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।