চলতি বছরের হজ ছিল এক কথায় নজিরবিহীন। ১৩০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৩০ জন হাজি সৌদি আরবে এসে সমবেত হন আল্লাহর ঘরে। এমন বিপুল সংখ্যক মানুষের ইবাদতের যাত্রা যেন শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হয়—সেই লক্ষ্যেই সৌদি আরব চালু করেছে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রযুক্তিনির্ভর এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত হজ ব্যবস্থাপনা।
সৌদির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক উপমন্ত্রী ড. আল-হাসান বিন ইয়াহইয়া আল-মানাখরা জানান, “এ বছর আমরা শুধু হজ আয়োজন করিনি, এক অভাবনীয় প্রযুক্তি বিপ্লব ঘটিয়েছি হাজিদের সেবায়।”
তিনি গর্বভরে বলেন, “১৩০টিরও বেশি দেশের হাজিদের স্বাগত জানানো সৌদি আরবের জন্য কেবল গৌরব নয়, এটা এক পবিত্র দায়িত্ব।”
এ বছরের হজে যেসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- ডিজিটাল ইমিগ্রেশন চেক – যা বিমানবন্দরেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে
- এআই-চালিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
- পরিধেয় স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ডিভাইস
- ড্রোনের মাধ্যমে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা
- উষ্ণতা পর্যবেক্ষণ সেন্সর
- ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড অনুবাদক
- স্মার্ট ব্রেসলেট ও রোবট গাইড – হাজিদের পথনির্দেশনায় সহায়ক হয়েছে
প্রতিটি প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য একটাই—হাজিদের ইবাদত যেন নিরাপদ ও মনোযোগে পূর্ণ হয়।
সরকারি, বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী মিলিয়ে আড়াই লাখেরও বেশি কর্মী কাজ করেছেন হাজিদের সেবায়।
সৌদি আরব হজের আগেই ৭৮টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং ১৩০টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে।
“আমরা চাইনি কেউ হজের মৌল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হোক,” বলেন আল-মানাখরা।
‘নো পারমিট, নো হজ’ কর্মসূচি ছিল কঠোরভাবে কার্যকর। উদ্দেশ্য ছিল—ভিড় কমিয়ে ইবাদতের পরিবেশ আরও সহজ করা। বহু ভাষায় এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
‘মক্কা রুট প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে আটটি দেশের বিমানবন্দরে আগেই ভিসা, বায়োমেট্রিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা সম্ভব হয়েছে। এতে সময় এবং হয়রানি কমেছে অনেকটাই।
অন্যদিকে, নুসুক অ্যাপ ও নুসুক কার্ড হাজিদের ব্যক্তিগত অভিযোগ জানানো, তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া এবং ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার সেবা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
চলতি বছর প্রচণ্ড গরম ছিল। ফলে সৌদি কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক ফ্রন্টলাইন কর্মীকে গরমজনিত রোগ শনাক্ত ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে অনেক হাজি গুরুতর জটিলতা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
আল-মানাখরা বলেন, “আমরা সারা বছর আল্লাহর মেহমানদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। ২০২৫ সালের হজ যেন আরও সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও মানবিক হয়—সে লক্ষ্যে প্রতিটি অংশীদার দেশের সঙ্গে আমাদের সংলাপ অব্যাহত থাকবে।”
হজ কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি লাখো মানুষের আত্মার সফর। আর সেই সফরকে সহজ, নিরাপদ এবং প্রযুক্তিনির্ভর করতে সৌদি আরব যে বহুমাত্রিক উদ্যোগ নিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভবিষ্যতের হজ হয়তো হবে আরও বেশি ‘ডিজিটাল’—তবে মূলটা থাকবে একটাই, হৃদয় থেকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া।