ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানায় একটি ওষুধ তৈরির কারখানায় ঘটে গেল ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড। সোমবার কর্মঘণ্টার মধ্যে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাগুলো।
স্থানীয় পুলিশ জানায়, তেলেঙ্গানার সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটি সম্পূর্ণ ধসে পড়ে। কারখানায় কাজ করা বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ, এবং অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
বিস্ফোরণের সময় কারখানায় অন্তত ৬০ জন কর্মী ছিলেন। অনেকেই ছিলেন উত্তর ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিক—ঝাড়খণ্ড, ওডিশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে এসেছিলেন তারা।
জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পারিতোষ পাঙ্কজ জানান, ৩১টি মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত ৩ জন মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
দগ্ধ দেহগুলোর অধিকাংশ এতটাই পোড়ানো অবস্থায় ছিল যে স্বাভাবিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
কারখানায় উৎপাদিত হতো মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ—যা ওষুধ, কসমেটিকস এবং খাদ্যশিল্পে একটি আবদ্ধকারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
একজন উদ্ধার কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান একপ্রেস পত্রিকাকে বলেন,
“যখন কর্মীরা স্প্রে ড্রায়ার চালাচ্ছিলেন, তখন এর ভেতরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। আর সেইসঙ্গে বাতাসে থাকা রাসায়নিকের সূক্ষ্ম ধুলোকণাও বিস্ফোরণ ও আগুনকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।”
বিস্ফোরণের পর কমপক্ষে ২৫ জন আহত শ্রমিককে হাসপাতালে নেওয়া হয়, যাদের শরীরে বিভিন্ন ডিগ্রির পোড়ার ক্ষত রয়েছে। অনেকেই বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
তেলেঙ্গানা ফায়ার ডিজাস্টার রেসপন্স ইমারজেন্সির পরিচালক জি.ভি. নারায়ণ রাও বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন,
“আমরা এখনো জানি না ধ্বংসস্তূপের নিচে কেউ রয়ে গেছে কিনা। সমস্ত ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলার পরই তা নিশ্চিত করা যাবে।”
সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৯০ দিনের জন্য কারখানার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে, যেহেতু বিস্ফোরণে অভ্যন্তরীণ যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মামলা করেছে পুলিশ, এক নিহত শ্রমিকের সন্তানের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়,
“এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কিছু শ্রমিকের আহত ও মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। আমরা বিষয়টি যাচাই করে দেখছি।”
তেলেঙ্গানার শাসক দল কংগ্রেস এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং মৃতদের পরিবার ও আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রতিজন মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।