চীন হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে আরো একধাপ এগিয়ে গেল। ‘ফেইতিয়ান-২’ নামে একটি সর্বাধুনিক হাইপারসনিক এয়ারক্র্যাফট পরীক্ষামূলকভাবে সফলভাবে উড়িয়েছে দেশটির নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি। চীনা গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, এই বিমান মাক ১২ অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ১৪,৮০০ কিলোমিটার (৯,২০০ মাইল) গতিতে চলতে সক্ষম।
এই গতি প্রচলিত হাইপারসনিক গতি (মাক ৫)-এর দ্বিগুণেরও বেশি, যা একে বিশ্বের দ্রুততম পরীক্ষামূলক বিমানের কাতারে স্থান দিয়েছে।
রকেট ও র্যামজেট একসঙ্গে, ‘বিশ্বে প্রথম’-
‘ফেইতিয়ান-২’-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এতে রকেট ও র্যামজেট ইঞ্জিন একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। রকেট ইঞ্জিন ভূমি থেকে আকাশে তুলে আনতে সাহায্য করে, আর র্যামজেট ইঞ্জিন অতিরিক্ত উচ্চতায় এবং উচ্চগতিতে গতিশীলতা বজায় রাখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক প্ল্যাটফর্মে এই দুই ইঞ্জিনের সফল সংমিশ্রণ এবং উড়ন্ত অবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক প্রপালশন সিস্টেম থেকে অন্যটিতে স্থানান্তর বিশ্বে প্রথমবারের মতো সফলভাবে করতে পেরেছে চীন।
চীনা গবেষকেরা জানিয়েছেন, ‘ফেইতিয়ান-২’ রকেট থেকে র্যামজেট প্রপালশনে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় তীব্র তাপ ও চাপ সহ্য করেছে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে, যা প্রযুক্তিগতভাবে এক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
চীনের প্রযুক্তিগত সাফল্য, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ-
এই উন্নয়ন কেবল প্রযুক্তিগত নয়, সামরিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (২০২৩) উল্লেখ করেছে, হাইপারসনিক অস্ত্র রাডার এড়িয়ে কম উচ্চতায় গতি করতে পারে এবং চলার পথ অনির্ধারিত হওয়ায় একে শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা কঠিন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফল পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরো উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, বিশেষ করে যখন তারা চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এর আগেই ট্রাম্প প্রশাসন ২৭টি চীনা কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যেগুলো এই প্রযুক্তি উন্নয়নে জড়িত ছিল।

ছবি প্রকাশ ও সামরিক বার্তা-
চীনের সংবাদমাধ্যমগুলো ‘ফেইতিয়ান-২’-এর লঞ্চপ্যাডে থাকা একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এয়ারক্র্যাফটটির আকার, ক্ষমতা, বহনক্ষমতা বা সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে গোয়েন্দা নজরদারি, স্ট্র্যাটেজিক স্ট্রাইক ও প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
হাইপারসনিক প্রযুক্তি কী?
-
মাক ১ = শব্দের গতি (প্রতি ঘণ্টায় ~১২৩৫ কিমি)
-
মাক ৫ বা তার বেশি = হাইপারসনিক
-
মাক ১২ = ‘ফেইতিয়ান-২’-এর সর্বোচ্চ গতি (প্রায় ১৪,৮০০ কিমি/ঘণ্টা)
রকেট ইঞ্জিনে জ্বালানি ও অক্সিডাইজার বহন করা হয়, যা একত্রে জ্বলে ধাক্কা (থ্রাস্ট) তৈরি করে। র্যামজেট ইঞ্জিন পরিবেশের বাতাস ব্যবহার করে জ্বালানি পোড়ায়, ফলে এটি শুধুমাত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কাজ করে। এই দুই প্রযুক্তিকে একত্রে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু ও স্থানান্তর করতে পারা আধুনিক বৈমানিক প্রযুক্তির অন্যতম বড় সাফল্য।
সামরিক ভারসাম্যে চীনের এগিয়ে চলা-
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেইতিয়ান-২ শুধু একটি প্রযুক্তিগত পরীক্ষা নয়; এটি চীনের পক্ষ থেকে সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের স্পষ্ট বার্তা। হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে চীনের এমন সাফল্য যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের কৌশলগত অবস্থানে নতুন করে চিন্তার খোরাক জোগাবে।
ফেইতিয়ান-২-এর উন্নয়ন চীনকে এই প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান দখলের পথে এগিয়ে নিচ্ছে, যেখানে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রও সমান তৎপরতা দেখাচ্ছে।