—খাদ্যকেন্দ্রে গুলি, শিশুসহ শতাধিক নিহত; বাস্তুচ্যুত মানুষ বলছে- ‘কোথাও জায়গা নেই’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা বিমান ও স্থল অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০৯ জন ফিলিস্তিনি। মেডিকেল সূত্র এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ইসরায়েলি সেনারা উত্তর ও দক্ষিণ গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলা জোরদার করেছে। এর মধ্যে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন।
এই সহিংসতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য “প্রয়োজনীয় শর্তে” সম্মত হয়েছে। তিনি এক টুইটে বলেন,
“আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করে এই যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে চাই। কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টায় যে শান্তি পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, সেটি হামাস গ্রহণ করবে বলে আশা করি।”
তবে আল জাজিরা ও ওয়াফা-র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঘোষণার দিনই গাজা ছিল এক রক্তাক্ত মাঠ। ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজার শেখ রাদওয়ান, জাবালিয়া এবং দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বোমা বর্ষণ এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
গাজায় সম্প্রতি ক্ষুধার বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) কয়েকটি সীমিত খাদ্যকেন্দ্র পরিচালনা করছে। মঙ্গলবার এক কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন অন্তত ১৬ জন। গত মে মাস থেকে জিএইচএফ-এর পাশে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০০ জনের বেশি।
এই ঘটনার পর ১৭০টির বেশি আন্তর্জাতিক এনজিও ও সাহায্য সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জিএইচএফ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে।
তাদের ভাষ্য,
“গাজার মানুষ এখন দুটি ভয়ংকর পছন্দের মুখে- ক্ষুধায় মারা যাওয়া অথবা খাবারের জন্য গুলিতে মারা পড়া।”
উত্তর গাজার গাজা সিটি ও জাবালিয়াতে ফের বোমা বর্ষণ শুরু করেছে ইসরায়েল। স্থানীয়রা বলছে, ঘরবাড়ি হারানো মানুষজন রাস্তার পাশে তাঁবু খাটিয়ে কোনোরকমে দিন পার করছে।
বাসিন্দা ইসমাইল বলেন,
“ঘরবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন করে আমরা বাস্তুচ্যুত। আশ্রয়ের জায়গা নেই। রাতজুড়ে বিমান আর ট্যাংকের শব্দে ঘুমানো যায় না।”
জাতিসংঘ জানায়, গাজার ৮২ শতাংশ এলাকা এখন হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে, নয়তো উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে।
এই হামলার মধ্যেই আসছে সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, মাঠে উল্টো বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনী একদিকে যুদ্ধবিরতির সম্মতিতে সম্মতি জানাচ্ছে, অন্যদিকে একই সময়ে গাজায় হামলা আরও বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এই উভয়মুখী অবস্থানকে অনেকেই ট্রাম্পের রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
বর্তমানে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনায় প্রধান বাধা হচ্ছে- ইসরায়েল পরবর্তী হামলার অধিকার চাইছে, অন্যদিকে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো সাময়িক চুক্তি মানছে না।
টাইমস অব ইসরায়েল-এর বরাতে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই ইসরায়েল এই অস্থায়ী চুক্তিতে সম্মতি জানাতে বাধ্য হয়েছে। তবে ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী,
“হামাস চুক্তি গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।”